ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫ , ১০ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

ড. জিসি দেবের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিবিধ

আমাদের বার্তা ডেস্ক 

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ২৬ মার্চ ২০২৫

সর্বশেষ

ড. জিসি দেবের মৃত্যুবার্ষিকী  আজ

বিখ্যাত দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ গোবিন্দচন্দ্র দেব এর আজ মৃত্যুবার্ষিকী। তার পুরো নাম গোবিন্দচন্দ্র দেব পুরকায়স্থ। কিন্তু জিসি দেন নামেই তিনি বেশি পরিচিত। তিনি ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি  সিলেট জেলার বিয়ানী বাজারের লাউতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

দেবের পূর্বপুরুষ ছিলেন ভারতের গুজরাটের বাসিন্দা ও কুলীন। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় উত্থানপতনের কারণে তার পূর্বপুরুষ পঞ্চম শতকে গুজরাটের আদিনিবাস ত্যাগ করে সিলেটে চলে আসেন এবং এখানেই স্থায়িভাবে বসবাস শুরু করেন। পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য অনুসারে তারা এখানে নব উদ্যোগে বেদ, বেদান্ত, উপরিষদচর্চা শুরু করেন। জিসি দেব ১৯২৯  খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার সংস্কৃত কলেজ থেকে দর্শন বিষয়ে বিএ (সম্মান) এবং ১৯৩১  খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে এমএ ডিগ্রি লাভ করে অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন।

অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি ‘রিজন, ইনটুইশন অ্যান্ড রিয়ালিটি’ নামক অভিসন্দর্ভ রচনা করে ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। কিছুকাল দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে অধ্যাপনা করে তিনি ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে যোগদান করেন।

চিন্তাচেতনায় দেব ছিলেন সক্রেটিসের ভাবশিষ্য। তার চিন্তাধারার বিষয় ছিলো বহু বিস্তৃত, সুদূরপ্রসারী ও গভীর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তার চিন্তায় একদিকে যেমন স্থান পেয়েছে গভীর ও সূক্ষ্ম দার্শনিক তত্ত্বালোচনা, অন্যদিকে সমাজ, জীবন, সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি ও ধর্মবিষয়ক ভাবনা। অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী দার্শনিক দেব সব ধর্মকে দেখেছেন উদার ও সর্বজনীন দৃষ্টিকোণ থেকে।

ড. দেবের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা মোট নয়টি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ আইডিয়ালিজম অ্যান্ড প্রগ্রেস, আইডিয়ালিজম এ নিউ ডিফেন্স অ্যান্ড এ নিউ এ্যাপলিকেশন, আমার জীবনদর্শন, এ্যাসপিরেশন অব দি কমন ম্যান, দি ফিলোসফি অব বিবেকানন্দ অ্যান্ড দি ফিউচার অব ম্যান, তত্ত্ববিদ্যাসার, বুদ্ধ দি হিউম্যানিস্ট । গ্রন্থগুলো তার জীবিতকালেই প্রকাশিত হয়। দি প্যারাবুলস অব দি ইস্ট এবং মাই আমেরিকান এক্সপিরিয়েন্স নামক গ্রন্থদুটি তার মরণোত্তর প্রকাশনা। এছাড়া দেশিবিদেশি পত্রিকায় ইংরেজি ও বাংলায় তার প্রায় শতাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

দর্শনে বিশিষ্ট অবদানের জন্য ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে জি.সি দেবকে সম্মানসূচক ‘দর্শন সাগর’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। একই বছর তার মানবতাবাদী দর্শন প্রচারের জন্য আমেরিকায় ‘দি গোবিন্দ দেব ফাউন্ডেশন ফর ওয়ার্ল্ড ব্রাদারহুড’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে গোবিন্দদেব দর্শন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে সরকার তাকে মরণোত্তর ‘একুশে পদক’ প্রদান করে।

মানবকল্যাণ সাধনায়, সত্য, সুন্দর ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায়, মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে, সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য এবং অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী দর্শন প্রচারের জন্য চিরকুমার দেব তার সব সম্পত্তি ও অর্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের পাকভারত যুদ্ধের সময় তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পাকিস্তানে নিজ জীবন বিপন্ন হতে পারে জেনেও তিনি দেশত্যাগ করেননি; এমনকি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি একাত্মতা ঘোষণা করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে পাকবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের গণকবরে তার মরদেহ সমাহিত করা হয়।

জনপ্রিয়