ঢাকা শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫ , ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

প্রাক-প্রাথমিকের পরীক্ষা-নিরীক্ষা নয় বছরেও শেষ হয়নি

শিক্ষা

মুরাদ মজুমদার 

প্রকাশিত: ০০:০০, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সর্বশেষ

প্রাক-প্রাথমিকের পরীক্ষা-নিরীক্ষা নয় বছরেও শেষ হয়নি

একে একে নয় বছর পেরিয়ে গেলেও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার শেষ হয়নি। পরীক্ষামূলকভাবে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়। পরবর্তী সময়ে দুই বছর মেয়াদে এই শিক্ষা চালুর সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত এক বা দুই বছর মেয়াদে কোনো কোথাও ঠিকমত ‘শিশু শ্রেণি’ চালু হয়নি।  আর এই সুযোগে সারা দেশে কিন্ডারগার্টেন ও নার্সারি স্কুলে শিক্ষা ‘বাণিজ্য তুঙ্গে। এগুলোতে শিশুদের কাঁধে বাড়তি বইয়ের বোঝাও চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ জন্য অভিভাবকদের বাড়তি খরচও করতে হচ্ছে। কোনোরকম প্রশিক্ষণবিহীন বেকার যুবক-যুবতীই সেখানে শিক্ষক পদে রয়েছেন। 

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহম্মেদ বলেছেন, ‘প্রাক-প্রাথমিকের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হয়নি। বর্তমানে তিন হাজারের (তিন হাজার ২১৪টি) মতো স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রয়েছে।’ 
আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এই স্তর চালু হবে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রাক-প্রাথমিকের কারিকুলাম (শিক্ষাক্রম) তৈরি করা হয়েছে। নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের খেলার ছলে শেখার বিষয়টিতে জোর দেয়া হয়েছে।’
সরকারি হিসেবেই সারা দেশে ৪৮ হাজার ৯৭৩টি কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের বেশিরভাগেরই নিবন্ধন নেই। একাডেমিক স্বীকৃতিও নেই। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো চলছে।

এ বিষয়ে গণশিক্ষা সচিব বলেন, বেসরকারি বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের একটি বিধিমালা থাকা সত্ত্বেও ‘প্রায় ৯০ ভাগ’ বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন ও একাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়াই চলছে।
২০১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ এবং নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে শিশুর বয়স চার বছর পূর্ণ হলে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীতে ভর্তি হবে। এ শ্রেণিতে দুই বছর অধ্যয়ন শেষে শিশুর বয়স ছয় বছর পূর্ণ হলে সে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হবে। এ দুই বছর ‘প্রাক-প্রাথমিক-১’ এবং দ্বিতীয় বছর ‘প্রাক-প্রাথমিক-২’ নামে পরিচিত হবে।

২০২২ খ্রিষ্টাব্দের জুনে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির’ (এনসিসিসি) সভায় প্রাক-প্রাথমিকের মেয়াদ দুই বছর করার অনুমোদন দেয়া হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষ অর্থাৎ ২০২৩ সাল থেকেই তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে জানা গেছে, দেশে প্রথমে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে সীমিত পরিসরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়। এরপর ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে পরীক্ষামূলকভাবে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়।

তবে ডিপিইর সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে শিশু শিক্ষার্থীর স্বল্পতা ও যথাযথ প্রস্তুতির ঘাটতির কারণে এ প্রক্রিয়া থমকে যায়। অভিভাবকরা সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে ‘কোমলমতি শিশুদের’ পাঠাচ্ছেন না। তারা বেসরকারি কিন্ডারগার্ডেন ও নার্সারি স্কুলে শিশুদের পাঠাচ্ছেন। এ কারণে দীর্ঘ সময়েও প্রাক-প্রাথমিকের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হয়নি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক লাখ ১৪ হাজার ৫৩৯টি। এর মধ্যে সরকারি ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। বাকি ৪৮ হাজার ৯৭৩টি কিন্ডারগার্ডেন ও বেসরকারি বিদ্যালয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাবেরী গায়েন গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে এক বছরের প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করার কথা ছিলো, তা এখনও চালু হয়নি। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এনজিও বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে চালানো হচ্ছে, যা হয় ‘খুব ব্যয়বহুল’ নয়তো ‘ নিচুমানের’ সেবা প্রদানকারী।

অধ্যাপক কাবেরী গায়েনের অভিযোগ, গত ১০-১২ বছরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক এবং শ্রেণিকক্ষের জন্য পৃথক পদ তৈরি করা ছাড়া, প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিন্ন মান বজায় রাখা বা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখার জন্য মন্ত্রণালয় কোনো নির্দিষ্ট আদেশ প্রচার করতে পারেনি।

সারা দেশে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু না হলেও এ স্তরের শিশুদের জন্য নিয়মিত ‘বই’ বা ‘খাতা’ ছাপিয়ে আসছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি কিন্ডাগার্ডের স্কুলগুলোও এই বই পাচ্ছে।

জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর বিষয়ে ডিপিই বা মন্ত্রণালয় (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা) বলতে পারবে। তবে আমরা কয়েক বছর ধরে শিশুদের বই ছাপছি।’
এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ‘শিশু’ প্রতি একটি করে মোট ৬৬ লাখ ২৯ হাজার ৮৪টি ‘আমার বই’  বিতরণ করা হয়েছে।

রাজধানীর মগবাজারের একটি কিন্ডারগার্ডেনের এক ‘শিশু’ শিক্ষার্থীর অভিভাবক হাবিবুর রহমান জানান, ‘আমার বই’ বিনামূল্যে দেয়া হলেও স্কুলের তালিকা অনুযায়ী তার সন্তানের জন্য ১২০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত পাঁচটি বই কিনতে হয়েছে।
দেশে এতোদিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু ছিলো; যা শিক্ষা ‘শিশু শ্রেণি’ নামে পরিচিত। ইংরেজি মাধ্যম এবং কিন্ডারগার্ডেনে প্লে-গ্রুপ, নার্সারি ও কেজি শ্রেণীও প্রাক-প্রাথমিক স্তরের মধ্যে পড়ে।

জনপ্রিয়