ঢাকা রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ , ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

অস্কার পেল ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র

বিনোদন

আমাদের বার্তা ডেস্ক 

প্রকাশিত: ১৯:১৭, ৩ মার্চ ২০২৫

সর্বশেষ

অস্কার পেল ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দমনপীড়নের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম ও নিজ ভূমি রক্ষার প্রচেষ্টার ঘটনাগুলো নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘নো আদার ল্যান্ড’ সেরা তথ্যচিত্র বিভাগে অস্কার জিতেছে। এটি ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ ও মানবাধিকারের লড়াইকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সোমবার (৩ মার্চ) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ‘নো আদার ল্যান্ড’ নির্মাণে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি চিত্রনির্মাতারা যৌথভাবে কাজ করেছেন, যা বিরল উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

তথ্যচিত্রটি নির্মাণে ২০১৯ থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময় লেগেছে। এটি মূলত ফিলিস্তিনের মানবাধিকারকর্মী বাসেল আদরার সংগ্রামের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত।

আদরা ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের দক্ষিণাঞ্চলে তার নিজ এলাকা মাসাফের ইয়াত্তায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ ক্যামেরাবন্দি করেন। সেখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয় ইসরায়েলি প্রশাসন।

ফিলিস্তিনের বাস্তবতা ও তথ্যচিত্রের গুরুত্ব

তথ্যচিত্রটিতে দেখানো হয়, শুরুতে আদরার সংগ্রাম বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছায়নি। পরে ইসরায়েলি সাংবাদিক ইউভাল আবরাহামের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আবরাহাম আদরার সংগ্রামকে আরও গ্রহণযোগ্যতা দিতে সাহায্য করেন এবং তাদের বন্ধুত্বের ফলশ্রুতিতেই তথ্যচিত্রটি নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়।

পুরস্কার গ্রহণকালে বাসেল আদরা বলেন, ‘বহু দশক ধরে ফিলিস্তিনিরা কঠোর বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছে। ‘নো আদার ল্যান্ড’ সেই বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে। ইসরায়েলি দখলদাররা আমাদের সম্প্রদায়কে প্রতিদিন সহিংসতার মুখে ঠেলে দিচ্ছে, বাড়িঘর ধ্বংস করছে এবং আমাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করছে।’

তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই অন্যায্য পরিস্থিতি বন্ধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিতে হবে এবং ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর জাতিগত নিধন রোধ করতে হবে।

নির্মাতাদের বার্তা

ইসরায়েলি নির্মাতা ইউভাল আবরাহাম বলেন, ‘আমরা একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে চেষ্টা করেছি। গাজার বিরুদ্ধে চলমান ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে এবং ৭ অক্টোবর হিংস্রভাবে ছিনিয়ে নেওয়া জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে।’

তিনি ইসরায়েলি সরকারের নীতির সমালোচনা করে বলেন, ‘জাতিগত আধিপত্যের পরিবর্তে রাজনৈতিক সমাধান বিবেচনা করা উচিত, যেখানে উভয় সম্প্রদায় তাদের জাতিগত অধিকার পাবে।’

তথ্যচিত্রের অন্যান্য অর্জন

রোববার (৩ মার্চ) অস্কারের পাশাপাশি ‘নো আদার ল্যান্ড’ বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড ও তথ্যচিত্র বিভাগে বিশেষ পুরস্কার জিতেছে। নিউইয়র্ক ফিল্ম ক্রিটিকস সার্কেল অ্যাওয়ার্ডেও এটি সেরা নন-ফিকশন সিনেমা বিভাগে পুরস্কৃত হয়েছে।

তবে অস্কার জয়ই ‘নো আদার ল্যান্ড’-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। তথ্যচিত্রটি মূলত বাসেল আদরার নিজস্ব আর্কাইভের ক্যামকর্ডার ফুটেজের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এতে ইসরায়েলি সেনাদের বুলডোজার দিয়ে ফিলিস্তিনি গ্রামগুলোর স্কুল ধ্বংস করা ও খাওয়ার পানির কূপ সিমেন্ট দিয়ে ভরে দেওয়ার দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতি

পশ্চিম তীরে বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করছেন। এর বিপরীতে প্রায় পাঁচ লাখ ইসরায়েলি সেখানে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করেছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো ফিলিস্তিনের পরিস্থিতিকে বর্ণবৈষম্যের সঙ্গে তুলনা করলেও ইসরায়েলি সরকার এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা পশ্চিম তীরকে ঐতিহাসিক ও ইহুদিদের পবিত্রভূমি হিসেবে বিবেচনা করে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে।

‘নো আদার ল্যান্ড’ তথ্যচিত্রটি ফিলিস্তিনের মানুষের দুর্দশা ও সংগ্রামকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

জনপ্রিয়