ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ , ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

উত্তরপত্রের সঠিক মূল্যায়ন জরুরি

মতামত

মাছুম বিল্লাহ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৫ মে ২০২৫

সর্বশেষ

উত্তরপত্রের সঠিক মূল্যায়ন জরুরি

মাছুম বিল্লাহ

দেশের শিক্ষাবিষয়ক একমাত্র প্রিন্ট জাতীয় পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’ ও ডিজিটাল পত্রিকা ‘দৈনিক শিক্ষাডটকম’সহ অন্যান্য জাতীয় দৈনিকগুলোতে চমৎকার একটি বিষয় ছাপা হয়েছে। বোধ করি শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবাই বিষয়টি লক্ষ্য করেছেন! চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার উত্তরপত্র গোপনীয়তার সঙ্গে মূল্যায়ন ও সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। পরীক্ষার উত্তরপত্র পরীক্ষক ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি, শিক্ষার্থী বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে দিয়ে মূল্যায়ন করানো যাবে না। এ অপরাধ প্রমাণিত হলে পরীক্ষা পরিচালন আইনে শাস্তি হবে। এ সংক্রান্ত চিঠি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানো পাঠানো হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার খাতা বিভিন্ন পরীক্ষকের কাছ মূল্যায়নের জন্য পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে এ ধরনের বিভিন্ন অভিযোগ গোপন সূত্র থেকে আসায় সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা বোর্ড।

বোর্ড চিঠিতে বলা হয়েছে ‘বোর্ডের পরীক্ষার উত্তরত্র একটি গোপনীয় বিষয়। এটি প্রধান পরীক্ষক বা পরীক্ষকদের কাছে পবিত্র আমানত। পরীক্ষার উত্তরপত্র প্রধান পরীক্ষক বা পরীক্ষক ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি, শিক্ষার্থী বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে দিয়ে বৃত্ত ভরাট/পূরণ করানো বা মূল্যায়ন করা পরীক্ষা পরিচালনা-সংক্রান্ত ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ৪২ নম্বর আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অপরাধ প্রমাণিত হলে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এ অবস্থায় পরীক্ষার উত্তরপত্র গোপনীয়তার সঙ্গে মূল্যায়ন ও সংরক্ষণ করার জন্য পরামর্শ দেয়া হলো। ধন্যবাদ জানাই শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষকে। বিষয়টি এতোদিন চিল ওপেন সিক্রেট। তারপরেও কেউ কোনো শব্দ উচ্চারণ করতেন না বিষয়টি নিয়ে। সেই অবস্থায় বোর্ড থেকে অফিসিয়াল লেটার ইস্যু করা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় কাজ। এর সঙ্গে আরো একটি নিদের্শনা জারি করা হলে ভালো হতো যে, মূল্যায়ন সঠিক হতে হবে। দয়া করে নম্বর দেয়া এক ধরনের চরম অবমূল্যায়ন। উত্তরপত্র সঠিকভাবে না পড়ে, যাচাই না করে দ্রততার সঙ্গে থাতা দেখা একটি ট্র্যাডিশনে পরিণত হয়েছে এবং খাতায় কিছু লিখলেই সেটি যৌক্তিক অযৌক্তিক কিংবা অপ্রাসঙ্গিক যাই হোক না কেনো নম্বর দেয়া শুধু অনৈতিক কাজই নয়, এটি পুরো মুল্যায়ন ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে কলুষিত করে, প্রশ্নের মুখে ঢেলে দেয়। যার প্রভাব হচ্ছে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে আসেন না, পড়তে চান না, লিখতে চান না, জানতে চান না। কারণ, তারা জানেন, খাতায় কিছু লিখে আসলেই পাস, ভালো ধরনের পাস। এ জন্য ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতে গেলে একজন প্রার্থী বোর্ডে কী ফল করে এসেছেন সেটি না দেখে তাকে বার বার বাজিয়ে দেখা হয় অর্থাৎ বোর্ড পরীক্ষার মূল্যায়নে তাদের বিশ্বাস নেই।

বোর্ডের পরীক্ষক থাকাকালীন সব মিটিংয়েই থাকতাম কিন্তু সবচেয়ে কাজের আলোচনা হতো ঢাকা বোর্ডে প্রফেসর ফরহাদ স্যার যখন ঢাকা বোর্ডের কন্ট্রোলার ছিলেন। ওই সময়কার মিটিংগুলোতে। তিনি প্রমাণসহ আমাদের দেখাতেন, কিছু শিক্ষক কীভাবে কাজের বুয়ার দ্বারা উত্তরপত্রের বৃত্ত ভরাট করিয়েছেন এবং কতো বড় বড় ভুল করেছেন। কীভাবে শিক্ষার্থী ও ছেলেমেয়েদের দ্বারা খাতা মূল্যায়ন করানো হয়েছে, কীভাবে অসচেতনতাবশত বোর্ড পরীক্ষার খাতার প্যাকেট বাসে, ট্রেনে শিক্ষক ফেলে গেছেন ও বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তিনি আরো দেখাতেন, বৃত্ত ভরাট করার কথা যেখানে ৮২ সেখানে করা হয়েছে ২৪ ও ২৮ ইত্যাদি বহু ধরনের মারাত্মক অনিয়ম, অসততাপূর্ণ কাজ শিক্ষকেরা করতেন। তখনকার শিক্ষকেরা বর্তমানের কালের চেয়ে অনেক সচেতন, ন্যায়নীতিবান এবং কাজের প্রতি মনোযোগী ছিলেন। তারপরও এতো বড় বড় অন্যায় কাজ হতো। আর বর্তমানকালে এসব ক্ষেত্রে কী হতে পারে সেটি সহজেই অনুমেয়।

আমি নিজে এমন সহকর্মী দেখেছি যে, বোর্ড থেকে বারবার খাতা আনতেন। জিজ্ঞেস করতাম ‘এতো খাতা এতো অল্প সময়ে দেখেন কীভাবে? উত্তরে বলতেন শ্রেক্সপিয়ারের ‘এস’ লেখা আছে এতোটুকু দেখি, আর কিছু দেখার সময় নেই, প্রয়োজনও নেই। বোর্ডের খাতায় নম্বর দিয়ে দিলে অসুবিধা নেই, অসুবিধা হয় যদি শিক্ষার্থীকে ফেল করানো হয়। কাজেই সবাইকে নম্বর দিয়ে দিই। এমনও হয়েছে শিক্ষক নিজে খাতা দেখেননি, পুরো খাতা দেখিয়েছেন তার স্ত্রীর দ্বারা যিনি নিজেও ওই বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। এতো সহজের মধ্যেও ওই স্ত্রী ইংরেজিতে অকৃতকার্য হলেন। অথচ ওই শিক্ষক তার সেই অকৃতকার্য স্ত্রীরা দ্বারা ওই বছর সমস্ত খাতা মূল্যায়ন করিয়েছেন। এই হচ্ছে বোর্ডের উত্তরপত্র মূল্যায়নের নমুনা! বর্তমান যুগে মূল্যবোধের যে চরম অবক্ষয়, মানহীন শিক্ষকে পরিপূর্ণ শিক্ষাক্ষেত্র। তাই ভাবি কী মূল্যায়ণ যে হচ্ছে! বোর্ড কতৃর্কপক্ষকে অনেক ধন্যবাদ বিষয়টি মনে করিয়ে অফিসিয়ালি চিঠি দেয়ার জন্য।

পরীক্ষা আর শ্রেণির সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে ওপরে উঠে যখন উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা যান, তখন তারা বোর্ডের মতো পাস চান, আর তাতে ব্যত্যয় ঘটলেই আন্দোলন, হুমকি, পরীক্ষা না দেয়া, ক্লাস না করা, শিক্ষক তথা প্রশাসনকে হুমকি প্রদান করা। এগুলো শিক্ষার চেইনের মতো। একটির সঙ্গে আরেকটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যখনই শিক্ষার্থীরা পরিশ্রম না করে কিংবা একেবারে অল্প পরিশ্রমে কিছু পেয়ে যান তখন তারা আর পড়তে বা জানতে চান না, যেটি শুরু হয়েছে অনেক আগেই। এটির তো রেশ টানা দরকার। রাজনৈতিক সরকারগুলো অযথা পাস, ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে পাবলিক পরীক্ষার ফল দেখানোর মধ্যে কী যে অর্জন করতেন তা বুঝতে কষ্ট হয়। তবে এটি দেখতাম যে ভুয়ায় ভর্তি সব প্রতিষ্ঠান! জাতি ধ্বংস করার মহাপরিকল্পনা। এটি যাতে আর না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

লেখক: ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক

জনপ্রিয়