ঢাকা মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫ , ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্ব

মতামত

রাজু আহমেদ

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ১৩ মে ২০২৫

সর্বশেষ

পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্ব

শিক্ষকরা কি প্রজন্মকে পুরোপুরি পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখেন? রাখেন তবে সেটা গুরুত্বের বিবেচনায় তৃতীয় স্তরে। সন্তানকে মানুষ কিংবা অমানুষ হিসেবে গড়ার প্রথম কারখানা পরিবার। পরিবারে মা–বাবা এবং নিকটাত্মীয়দের আচরণেই শিশুর মানসিক গঠন তৈরি হয়।

মাতৃভাষা কী ব্যাকরণ মেনে শিখেছি? মোটেই না। স্বতঃস্ফূর্ততায় যেমন শিশু মায়ের ভাষায় কথা বলতে শেখে, তেমনি সততা–অসততা, সত্য–মিথ্যা কিংবা উচিত–অনুচিত প্রভৃতি শিশুরা পরিবার থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেখে।

দেখে শেখার মতো শক্তিশালী শেখার দ্বিতীয় কোনো পদ্ধতি নেই। চরিত্র কেমন হবে, নারী–পুরুষ, বড়–ছোটের সঙ্গে কেমন আচরণ করবে কিংবা কতোটা মানবিক–অমানবিক হিসেবে বেড়ে উঠবে-সেটার ভিত্তি মূলত পরিবার থেকেই রচিত হয়।

তাই তো পারিবারিক শিক্ষাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাবা–মায়ের আচরণের প্রায় প্রতিলিপি সন্তানের কথা ও কাজ দ্বারা প্রকাশিত হয়। মোটকথা সন্তানের আচরণ বাবা-মায়ের চরিত্রের বাটখারা। এটা শুধু জেনেটিক বিবেচনায় নয় বরং কার্যকারণ সম্পর্কের ফলাফল।

সন্তানকে ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক পরিবর্তনের দ্বিতীয় অনুষঙ্গ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজের রাজনীতি, অর্থনীতি, বণ্টননীতি কিংবা ন্যায়নীতির বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শিশু ধারাবাহিকভাবে শেখে।

যে সমাজে বৈষম্য প্রকট, অনাচারের ক্ষত গভীর কিংবা প্রভু–দাসের সম্পর্ক অমানবিক, সেখানে বেড়ে ওঠা শিশুদের একাংশ প্রভু হিসেবে আবির্ভূত হবে এবং বাকিরা দাসদের মতো মেনে নেয়ার জীবনযাপন করবে। তারা প্রশ্ন করতে শিখবে না।

যে সমাজ অসৎ, সে সমাজের শিশু ও বৃদ্ধ, নারী ও অক্ষম সুযোগ পেলেই অন্যায় করবে। স্বার্থের জন্য নিয়ম ভাঙবে। তাই তো ঘটছে। অপরাধ জেনেও অপরাধীরা বীরবেশে অন্যায় করছে। সেটা নিয়ে তাদের মধ্যে অনুশোচনার ছিঁটেফোঁটাও নাই বরং গর্ব সীমাহীন।

তবে শিক্ষক কী পারেন? পরিবার ও সমাজ থেকে শিখে আসা ভুলগুলো সন্তানকে ধরিয়ে দিতে পারেন। উচিত ও অনুচিতের পার্থক্য দেখিয়ে দিতে পারেন। শিক্ষক যখন ন্যায়ের পাঠ দেন, সুনীতি শেখান, তখন শিশুদের মনোজগৎ আলোড়িত হয়।

তবে নিখাদ বাস্তবতা হচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের সংস্পর্শ ছেড়ে তাকে আবার পরিবার ও সমাজের কাছে ফিরতে হয়। প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের ইউটোপিয়ান ভাবনা তার আটকে থাকার সুযোগ নেই। তাকে তো জীবন ও জীবিকার জন্য সংগ্রামে নামতে হয়।

যখন শিশু দেখে তার বাবা দুর্নীতিবাজ-ঘুষখোর, মা লোভী, গিবতকারী এবং প্রতিবেশীরা অহংকারী ও অসহনশীল তখন স্রোতের বিপরীতে শিশু সাঁতরাতে অক্ষম হয়। ক্ষমতাশালীদের দ্বারা ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনীতিবিদদের দ্বারা দেশের স্বার্থ বিক্রির উৎসব এবং ব্যবসায়ীদের দ্বারা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার ফাঁদ দেখার পরে প্রজন্মের নবীন সদস্যরাও সেদিকে ধাবিত হয়।

কেনোনা শিশুরা বয়স ও মানসিক গঠনের যে স্তরে থাকে, সেখানে ভোগকে উৎসব মনে হয়। ক্ষমতা দেখানোর স্পৃহা কাজ করে। তখন তো সবকিছু রঙিন মনে হয়।

কাজেই শিশু সমাজের বাস্তবতার সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখা তত্ত্বের তুলনা করে। যখন তার কাছে বাস্তবতাকে শক্তিশালী মনে হয়, তখন সে শিক্ষাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে। বই ও শ্রেণিকক্ষের ন্যায়ভিত্তিক শিক্ষা যখন পরিবার ও সমাজের বাস্তবতায় খাটে না, মেরুদণ্ড তুলে শিক্ষক ও শিক্ষা দাঁড়াতে পারে না তখন শিক্ষকদেরকে তাদের জীবনে অপ্রয়োজনীয় উপস্থিতি হিসেবে গণ্য করতে থাকে।

সন্তানকে মানুষ করার জন্য পরিবার ও সমাজকে বদলাতে হবে। প্রজন্মের নেশায় আসক্ত হওয়া, পড়াশোনায় মনোযোগ না দেয়া এবং বিপথগামী ও উগ্র মনোভাবাপন্ন হওয়া এসব পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমন্বিত ব্যর্থতার ফল। 

দুর্নীতিবাজ অভিভাবকের কবল থেকে, ঘুণে ধরা সমাজ থেকে প্রকৃত মানুষ বের করা মুশকিল। শিক্ষক যতো চেষ্টা করুক—পরিবার ও সমাজ সাপোর্টিভ না হলে সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত হিসেবে জাতিকে গড়ে তোলা সম্ভব, শিক্ষার হার বাড়ানো সম্ভব কিন্তু সন্তানকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়া প্রায় অসম্ভব।

পারিবারিক রীতিনীতি, সামাজিক মূল্যবোধ, প্রাতিষ্ঠানিক ন্যায়নীতি শিক্ষাকে টেকসই করে। শিক্ষকদের কাছে কোনো ঐশ্বরিক জাদুর জিয়নকাঠি নাই, যেটা দ্বারা প্রজন্মকে এককভাবে মানুষ করে গড়ে তোলা সম্ভব। পরিবারের সদস্য, সমাজের আদর্শ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধকরা সমসূত্রে ঐক্যবদ্ধ হলে রাষ্ট্র ও জাতি একটা ‘মানুষ’ প্রজন্ম উপহার পাবে।

লেখক: শিক্ষক

 

জনপ্রিয়