ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫ , ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

পরিবেশ রক্ষায় কচ্ছপ টিকিয়ে রাখতে হবে

মতামত

সাধন সরকার

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ২৩ মে ২০২৫

সর্বশেষ

পরিবেশ রক্ষায় কচ্ছপ টিকিয়ে রাখতে হবে

আজ ২৩ মে। বিশ্ব কচ্ছপ দিবস। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন জীবগুলোর মধ্যে কচ্ছপ একটি। কচ্ছপ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা তৈরি, এই জীবের প্রতি ভালোবাসা ও এর সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর ২৩ মে সারাবিশ্বে ‘বিশ্ব কচ্ছপ দিবস’ পালন করা হয়। মূলত ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আমেরিকান টরটয়েজ রেসকিউ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দিবসটি পালনে ভূমিকা নিয়েছিলো। সেই থেকেই সারাবিশ্বে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।

তথ্য মতে, বিশ্বে প্রায় ৩০০ প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে। যদিও এর অনেক প্রজাতি এখন বিপন্ন। বাংলাদেশে ২০ প্রজাতির কচ্ছপ ছিলো। কিন্তু অনেক প্রজাতি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার’ (আইইউসিএন)-এর মতে সামুদ্রিক কচ্ছপ সংকটাপন্নের নানাবিধ কারণ রয়েছে।

জেলেদের মাছ ধরার জালে কচ্ছপ আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। সামুদ্রিক এলাকায় কচ্ছপের ডিম পাড়ার স্থান নিরাপদ নয়। অনেকে কচ্ছপের ডিম পাড়ার মৌসুমে ডিম সংগ্রহ করেন। ডিম পাড়ার মৌসুমে পর্যটকদের আনাগোনা ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে কচ্ছপের আবাসস্থল ধ্বংস করা হচ্ছে।

সমুদ্রে প্লাস্টিক ও রাসায়নিকের দূষণ, খাদ্যশৃঙ্খলে পরিবর্তন ও সমুদ্রে ফেলে দেয়া পরিত্যক্ত জালে জড়িয়ে কচ্ছপ মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া জমিতে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে কচ্ছপের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইতে না পেরে কচ্ছপের প্রজনন প্রক্রিয়া ও সামগ্রিকভাবে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। হঠাৎ অতিরিক্ত বৃষ্টি ও তাপমাত্রার প্রভাবে কচ্ছপের প্রজননকাল ও ডিম পাড়ার জন্য বাসা বানানোর সময়ের হেরফের হয়ে যাচ্ছে।

ধীরগতির এই প্রাণীটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় খুবই উপকারী। এই সর্বভুক প্রাণী পঁচা-গলা, ময়লা ও মরা প্রাণী খেয়ে পরিবেশের দূষণ রোধ করে। মশার ডিম, লার্ভা ও ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে মানুষের সুস্থ জীবন গঠনে ভূমিকা রাখে। জলজ উদ্ভিদ, আক্রমণাত্মক ও ক্ষতিকর ছোট মাছ ও মৃত প্রাণী খেয়ে এটি পরিবেশের সুরক্ষা দান করে। এই প্রাণীটি তাদের বসবাসকৃত জলাশয়ের তলা পরিষ্কার করে জলের ইকোসিস্টেম বজায় রাখে। শান্ত স্বভাবের এই প্রাণীটি দীর্ঘকাল বেঁচে থাকে।

কচ্ছপের আয়ু ১০০ বছরের বেশি। শক্ত খোলসের এই সরীসৃপ প্রাণীটি জল ও স্থলে উভয় স্থানেই বাস করে। এরা তৃণভোজী ও মাংসাসী প্রাণী। বাংলাদেশের খাল-বিল-পুকুরসহ বিভিন্ন ধরনের জলাশয়ে মিষ্টি পানির কচ্ছপ দেখা যায়। গ্রাম অঞ্চলে এখনো মিষ্টিপানির কচ্ছপ দেখা যায়। অবাক করা বিষয় হলো, কচ্ছপ একবার নজরে আসলে মানুষ এটাকে যেকোনো উপায়ে ধরার চেষ্টা করে।

কচ্ছপ ধরে হয় ভক্ষণ অন্যথায় বিক্রি করার একটা রীতি দাঁড়িয়ে গেছে! কচ্ছপেরও যে বাঁচার অধিকার রয়েছে-এটা আমরা ভুলে গেছি। গ্রামাঞ্চলে বিল-ডোবায় মৌসুমভিত্তিক কচ্ছপ শিকারিদের দেখা যায়। কচ্ছপ জেলেদের বন্ধু হিসেবে কাজ করে। অবাক করা বিষয় হলো, সেই জেলেদের জালে কচ্ছপ ধরা পড়লে তারা সেটিকে আর ছেড়ে দিতে চান না।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কচ্ছপের ডিম পাড়ার মৌসুমে নানা ধরনের সহযোগিতা করা হয়। যে স্বাদু পানির জলাধার বা সমুদ্রে কচ্ছপ থাকে সেখানকার উপকূলের মাটিতে এসে কচ্ছপ ডিম পাড়ে। সংবাদমাধ্যম ‘ডয়েচে ভেলে’র এক সংবাদে জানা যায়, ভারতের ওডিশা রাজ্যের উপকূলে কচ্ছপের ডিম পাড়ার মৌসুমে ডিমের সুরক্ষায় স্থানীয়রা কৃত্রিমভাবে সহযোগিতা করে থাকে।

স্থানীয়ভাবে আহত কচ্ছপকে সহযোগিতা, ডিম সংরক্ষণ ও কৃত্রিমভাবে ডিম ফোটাতে হ্যাচারিরও ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশে শুধু কচ্ছপ ধরা, মারা ও বিপণন নিষিদ্ধ করেই দায় সারা হয়েছে! মাঠ পর্যায়ে কচ্ছপ ধরা ও কেনাবেচার সঙ্গে কেউ জড়িত কি না তা তদারকির বাইরে রয়ে গেছে। দিন দিন কচ্ছপের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একটা সময় কচ্ছপ রপ্তানিযোগ্য পণ্য ছিলো। কিন্তু রপ্তানি করতে গিয়ে কখন যে কচ্ছপের প্রজাতি বিলুপ্তের পথে চলে গিয়েছে তা টেরই পাওয়া যায়নি।

আমরা কচ্ছপ থাকতে কচ্ছপের গুরুত্ব বুঝিনি। এখনো কচ্ছপ ধরা ও খাওয়া থেমে নেই। চোরা শিকারিরা জলাশয় থেকে কচ্ছপ শিকার করে বাজারে গোপনে চড়া দামে বিক্রি করেন। পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী আইন অনুসারে কচ্ছপ শিকার করা, ধরা, মারা, বিক্রি, বিপণন, স্থানান্তর, চাষ ও পাচার করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরিবেশ বিপর্যয় ও অসচেনতার কারণে কচ্ছপের প্রজাতি আজ বিলুপ্তির পথে। কচ্ছপ রক্ষায় মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। কচ্ছপের বাসস্থান ও ডিম পাড়ার স্থান সংরক্ষণ করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে কচ্ছপ আহরণ ও আহারের মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। কচ্ছপ রক্ষা করতে না পারলে পরবর্তী প্রজন্মকে হয়তো জাদুঘরে গিয়ে কচ্ছপের খোলস দেখতে হবে।

লেখক: শিক্ষক

 

জনপ্রিয়