ঢাকা শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫ , ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

হজের তাৎপর্য ও গমনেচ্ছুদের করণীয়

মতামত

যাহীন মুহাম্মাদ, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ১৪:৪২, ২৮ মে ২০২৫

সর্বশেষ

হজের তাৎপর্য ও গমনেচ্ছুদের করণীয়

কাবা শরিফ

হজরত ইবরাহীম (আ.) কাবা ঘরের পুনর্নির্মাণ কার্য সমাপ্ত করে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে হজের ঘোষণা প্রদান করেন। তাঁর এ ঘোষণা তখন পৃথিবীতে বিদ্যমান ও কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী সকল মানুষের কানে পৌঁছে দেওয়া হয়। কিয়ামত পর্যন্ত যারা হজ করবে; তারা সেদিন ইবরাহীম (আ.)-এর উক্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে বলেছিল, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক।’ 

হজ ও উমরাহ-এর সংজ্ঞা: হজ অর্থ কোনো মহৎ কাজের ইচ্ছা করা। হজের নিয়তসহ ইহরাম ধারণ করে নির্দিষ্ট দিনে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা ও কাবা শরিফ তাওয়াফ করাকে হজ বলে। আর উমরাহ অর্থ পরিদর্শন করা। উমরাহর নিয়তে ইহরাম ধারণ করে তাওয়াফ ও সায়ি করে মাথা মুণ্ডন করে ইহরামমুক্ত হওয়াকে উমরাহ বলে।

হজ কার ওপর ফরজ: হজ ইসলামের মৌলিক পাঁচ ভিত্তির অন্যতম। নবম হিজরি মতান্তরে ষষ্ঠ হিজরিতে তা ফরজ হয়। প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ও মক্কায় গিয়ে হজকার্য সম্পন্ন করে ফিরে আসার সামর্থ্য রাখে এমন প্রত্যেক মুসলমান নারী পুরুষের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। তবে মহিলাদের জন্য স্বামী বা মাহরাম পুরুষ সঙ্গে থাকা শর্ত। মাহরাম কারা? যাদের সঙ্গে কখনো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায় না তারাই মাহরাম। যেমন: পিতা, পুত্র, আপন ও সৎ ভাই, দাদা-নানা, আপন চাচা ও মামা, ছেলে বা নাতি, জামাতা, শ্বশুর, দুধ ভাই, দুধ ছেলে প্রমুখ। তবে একা একা দুধ ভাইয়ের সঙ্গে এবং যুবতী শ্বাশুরীর জামাতার সঙ্গে যাওয়া নিষেধ। 

হজের ফজিলত: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে নবজাতক শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর প্রকৃত হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়। (বুখারি শরিফ: ১৫২১)

হজ করতে বিলম্ব করা উচিত নয়: যে বছর হজ ফরজ হয় সে বছরই তা আদায় করা উচিত। অযথা বিলম্ব করা গুনাহ। হজ একবার ফরজ হলে আর কখনো মাফ হয় না। নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ করার ইচ্ছা করে সে যেন তা দ্রুত আদায় করে নেয়। কেননা মানুষ কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ে, কখনো সম্পদ খরচ হয়ে যায়, কখনো সমস্যার সম্মুখীন হয়। (ইবনে মাজাহ : ২০৭)
হজ না করার পরিণতি: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হজ ফরজ হওয়ার পর তা আদায় না করে মৃত্যুবরণ করা আর ইহুদি বা খ্রিস্টান হয়ে মৃত্যুবরণ করার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। (তিরমিজি : ১/১৬৭)
হজের নির্ধারিত সময় ও স্থান : হজের নির্দিষ্ট সময়: শাওয়াল জিলকদ ও জিলহজের প্রথম ১০দিন। বিশেষত ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত পাঁচদিন। এ পাঁচদিনই মূলত হজ পালন করা হয়। হজের নির্ধারিত স্থান: কাবা শরিফ, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফা। 

হজ তিন প্রকার : (১) ইফরাদ : শুধুমাত্র হজের নিয়তে ইহরাম ধারণ করে ওই ইহরামেই হজকার্য সম্পন্ন করা। (২) তামাত্তু : শুধুমাত্র উমরাহর নিয়তে ইহরাম ধারণপূর্বক উমরাহর আমল সম্পন্ন করে মাথা মুণ্ডিয়ে ইহরামমুক্ত হওয়া। অতঃপর সে সফরেই হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে হজকার্য সম্পাদন করা। (৩) কিরান : একসঙ্গে উমরাহ ও হজের নিয়তে ইহরাম ধারণপূর্বক ওই একই ইহরামে উমরাহ ও হজ পালন করা। 

এ তিন প্রকারের মধ্যে উত্তম হলো কিরান হজ। কিন্তু ইহরাম দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে নিষেধাজ্ঞাবলি সঠিকভাবে মেনে চলতে না পারার আশঙ্কা থাকলে তামাত্তু হজই উত্তম। 

হজে যাওয়ার প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর করণীয়: মানুষের অধিকারের প্রতি যত্নবান হওয়া। ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করা। ইবাদতে ত্রুটি থাকলে সংশোধন করা। তাওবা-ইস্তিগফার করা। এমন সফর-সঙ্গী নির্বাচন করা যিনি নেককার ও সহযোগিতাকারী। বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত ও জিকির করা। হজের মাসআলা-মাসায়েল শেখা। 

হজের নিয়ত খাঁটি হওয়া জরুরি: হজে যাওয়ার সময় নিয়ত বিশুদ্ধ করে নিতে হবে। মহান আল্লাহর হুকুম পালনার্থে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হজ করছি এমন নিয়ত করতে হবে। লোকে হাজি বলবে, সম্মান দেখাবে, প্রসিদ্ধি অর্জন হবে, ব্যবসা ভালো জমবে, ইলেকশনে ভালো করা যাবে এধরনের মনোভাব নিয়ে হজ করলে সাওয়াব তো হবেই না; বরং রিয়ার কারণে গুনাহ হবে। হালাল টাকা হজ কবুলের শর্ত: হজের জন্য যে টাকা খরচ করা হবে তা হালাল হতে হবে। হজের মধ্যে হারাম টাকা খরচ করাও হারাম। যে হজে হারাম টাকা খরচ করা হয়, সে হজ কবুল হয় না। 

লেখক : মাদরাসা শিক্ষার্থী

জনপ্রিয়