
রাজধানীর টিকাটুলির ঐহিত্যবাহী শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মাস্টার রোলে নিয়োগপ্রাপ্ত খণ্ডকালীন কতিপয় শিক্ষকদের দাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মৃতিবিড়জিত এ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষক ষড়যন্ত্র করে বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি ও অধ্যক্ষসহ বেশিরভাগ শিক্ষকদের জিম্মি করে ইচ্ছেমতো কলেজ পরিচালনা করতে চাচ্ছেন। তাদের নানা ষড়যন্ত্রের বলি হয়ে ইতোমধ্যেই গভর্নিং বডির সভাপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষক হামিদা খাতুন, নাসরিন সুলতানা, নুসরাত জাহান এবং মাস্টার রোলে নিযুক্ত বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আকলিমা আকতার, সৈয়দা মেহনাজ নাইয়ারা ও রেখা মন্ডল দীনাসহ কয়েকজন এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের কয়েকজন বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে নিয়োগ পান।
জানা গেছে, সভাপতি ‘পদত্যাগ করেছেন’ এমন তথ্য পেয়ে ষড়যন্ত্রকারী শিক্ষকরা গত শুক্রবার ছুটির দিনও কলেজে গিয়ে উল্লাসে মেতে উঠেন। তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুল বুঝিয়ে অন্য সাধারণ শিক্ষকদেরও ডেকে আনেন। এ সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে তারা হেনস্তা এবং একজন সহকারী শিক্ষকের গায়েও হাত তোলেন। তারা অধ্যক্ষের মোবাইলও ছিনিয়ে নেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর মধ্যে আকলিমা আকতার ঔদ্ধত্য আচরণসহ নানা অনিয়মে বিভিন্ন সময় একাধিকবার শোকজের মুখোমুখি হয়েছেন। বিএড স্কেল পাওয়ার জন্য দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া বিএড সনদ দাখিল করেছিলেন তিনি এমন অভিযোগও পাওয়া যায়।
মাস্টার রোলে খণ্ডকালীন সৈয়দা মেহনাজ নাইয়ারাকে দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্রেণিতে নিয়মিত ফলাফল খারাপ হওয়ায় সতর্কও করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরাও অভিযোগ করেন। কোচিং বাণিজ্যের কারণে ইংরেজি শিক্ষক না হয়েও তিনি জোর করে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বিষয়ে পাঠদানে বাধ্য করতেন। কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করার প্রতিবাদে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষক-শিক্ষর্থীরা মানববন্ধন করলেও মেহনাজ তাতে ইচ্ছাকৃতভাবে অনুপস্থিত ছিলেন।
খণ্ডকালীন আরেক শিক্ষক রেখা মন্ডল সরকারি নির্দেশ অমান্য করে শিক্ষার্থীদের প্রায়শ শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। এজন্য একাধিকবার তাকে সতর্ক করে কমিটি।
জানা যায়, রিয়াজউদ্দিন দায়িত্ব নেয়ার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী ছিলেন ২ হাজারের মতো। বর্তমানে তা প্রায় তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে এসএসসি ও এইচএসসির কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এ ছাড়া তিনি ডিবেটিং ক্লাব, কারাতে প্রশিক্ষণ, হ্যান্ডবল, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও পুরো ক্যাম্পাসকে সিসি টিভির আওতায় আনয়নসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাথমিক শাখার একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, রিয়াজ উদ্দিন কেনো পদত্যাগ করেছেন সেটা আমার জানা নেই। তবে তার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগের কথা বলা হয় তাহলে বলবো সবই মিথ্যাচার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যাপীঠ হিসেবে এর উন্নয়নে মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করেছি। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠসহ সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন করেছি। সুউচ্চ ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে।
এই কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার কারণে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে বাইরের কিছু লোকের প্ররোচনায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমি স্বেচ্ছায় সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। আমি নিশ্চিত তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হবো, যোগ করেন তিনি।