
আমাদের সামাজিক জীবনে আদব-কায়দার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই অন্যের কাছ থেকে সুন্দর আচরণ প্রত্যাশা করি কিন্তু নিজেরা তা করতে ভুলে যাই। যে ব্যক্তির আচরণ সুন্দর সকল মানুষ তাকে ভালোবাসে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। তাই সবসময় মানুষের সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলা উচিত। সুন্দর আচার-ব্যবহারের কারণে যে মুখটি প্রিয় হয়, অন্যদিকে অসুন্দর আচার-ব্যবহারের কারণে সে মুখটি অপ্রিয় হয়ে যায়। সামাজিক মানুষ হিসেবে আমাদের কর্তব্য অন্য মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা, ভালো ব্যবহার করা, সালাম দেয়া, কুশলাদি জিজ্ঞেস করা, ঝগড়া-ফ্যাসাদ না করা, রাগের স্বরে কথা না বলা, কাউকে অপমান-অপদস্থ না করা, অন্যের সুখে সুখী হওয়া এবং অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া, বিপদে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা ইত্যাদি।
আমি যখন হাইস্কুলে ভর্তি হই তখন দেখেছি হেড স্যারের কক্ষে এই নীতিবাক্যটি বড় অক্ষরে লেখা, Students should be taught not only to be scholars but also to be gentlemen. হেড স্যার প্রায়ই বলতেন, Manners make the men. তিনি প্রায়ই ইসমাইল হোসেন সিরাজীর ‘আদব-কায়দা’ বইখানি পড়তে উপদেশ দিতেন। আমার হেডমাস্টার মরহুম ওয়ালি উল্লাহ পাটোয়ারী সভ্যতা, ভদ্রতা ও অমায়িকতার প্রতীক ছিলেন। শ্রেণিকক্ষে তিনি শিক্ষার্থীদেরকে কথায় কথায় কাঁদাতে ও হাসাতে পারতেন। যে শিক্ষার্থী ভদ্র ও নম্র, কোনো শিক্ষক তাকে ভালো না বেসে পারেন না, তার প্রতি শিক্ষকের একটু সুনজর থাকবেই ‘Courtesy costs nothing rather buys something’.
শিষ্টাচার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির জীবন পরিশুদ্ধ ও পরিপাটি হয়। কাজী কাদের নেওয়াজ-এর লেখা ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতাটি আজও মনে পড়ে। বাদশা আলমগীরের ছেলে একদিন তার ওস্তাদজির পায়ে পানি ঢালছিলেন আর ওস্তাদজি নিজেই তার পা পরিষ্কার করছিলেন। এই দৃশ্যটি বাদশার দৃষ্টিগোচর হয়। পরদিন বাদশা তার ছেলের শিক্ষককে সালাম পাঠালেন এবং আবদারের সঙ্গে বললেন আমার ছেলে আপনার কাছ থেকে পরিপূর্ণ শিক্ষা পায়নি। আমি দেখেছি সে তার ওস্তাদকে যথাযথ সম্মান দিতে শেখেনি। আপনি কেনো নিজ হাতে আপনার পা পরিষ্কার করছিলেন? আপনার ছাত্রের উচিত ছিলো তার এক হাত দিয়ে ওস্তাদজির পায়ে পানি ঢালা এবং অন্য হাত দিয়ে পা পরিষ্কার করে দেয়া।
বিশ্ববিজয়ী আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট একদিন এক বয়স্ক ব্যক্তির কাছে গিয়ে অহংকার করে বলছিলেন, ‘আমি বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডার। বলুন, আপনার জন্য কী করতে পারি? বৃদ্ধটি তখন সকালবেলায় সূর্যের আলো থেকে রোদ পোহাচ্ছিলেন, বৃদ্ধ উত্তরে বলেন তুমি আমাকে যা দিতে পারো না তা থেকে বঞ্চিত করার অধিকার তোমার নেই। সুতরাং, তুমি সরে দাঁড়াও, আমাকে রোদ পোহাতে দাও।’ উত্তম আচরণের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে বিনয়। যখন কারো অন্তরে বিনয়বোধ কাজ করবে এবং সে বিশ্বাস করবে যে আমি ছোট, অন্য সবাই বড়, তখন সে কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে পারে না। কোনো মানুষ খারাপ আচরণ করে তখনই, যখন সে নিজেকে বড় মনে করে এবং অন্যকে ছোট ও তুচ্ছ ভাবে। সুতরাং মন্দ আচরণের মূল কারণ হচ্ছে অহংকার। সমাজ ও রাষ্ট্র এমনকি পরিবারে ইদানিং যে বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে তা হলো আদব-কায়দার অভাব।
সুশিক্ষার জন্যই মূলত শিক্ষক। শিক্ষকরা হচ্ছেন মানুষ তৈরির কারিগর। পৃথিবীতে সবচেয়ে সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ পেশা হলো শিক্ষকতা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পেশার লোকেদের বৈশিষ্ট্যগুলোও শ্রেষ্ঠ হওয়া আবশ্যক। তাহলে আদব-কায়দা সম্পন্ন শিক্ষার্থী গড়ে তোলা সম্ভব। তাই একজন শিক্ষক হবেন শালীন, মার্জিত ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তিনি তার ব্যক্তিত্বরক্ষাকারী পোশাক পরিধান করবেন, আদর্শবান হবেন, আদর্শিক জ্ঞানের অধিকারী হবেন, উত্তম আদর্শের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলবেন, কথা ও কাজে মিল রাখবেন, আদর্শ প্রচারে কৌশলী ও সাহসী হবেন, শিক্ষকতাকে পেশা ও নেশা হিসেবে নিবেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোসহীন হবেন, শুদ্ধ উচ্চারণ, প্রকাশভঙ্গি ও গভীর জ্ঞানের অধিকারী হবেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি মমত্ববোধসম্পন্ন হবেন। একইসঙ্গে নিয়মিত জ্ঞানচর্চা করবেন, ক্লাসে পড়ানোর জন্য আগেই প্রস্তুতি নেবেন, মেধা বিকাশে সহায়ক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন, স্নেহ-মমতা দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াবেন, সকল শিক্ষার্থীকে সমান চোখে দেখবেন, শিক্ষার্থীদের জ্ঞান লাভে উৎসাহিত করবেন, শাসন করবেন তবে প্রহার বা নির্মমতা প্রদর্শন করবেন না। এ ছাড়া দরদি মন নিয়ে তাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন, বিচক্ষণ হবেন, ছাত্রদের মন-মেজাজ পছন্দ-অপছন্দ ও কোনো কিছু গ্রহণ করার ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ে দৃষ্টি দেবেন, নিয়মনীতির ক্ষেত্রে কঠোর হবেন এবং অভিভাবকের জায়গায় নিজেকে প্রতিস্থাপিত করে অনুকরণীয় হবেন। ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে, এই স্বপ্ন সব মানুষেই দেখে।’ সুতরাং অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজ করলে জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি লাভ করা সম্ভব। নচেৎ জীবন শুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত হবে।
বর্তমান সামাজিক পরিমণ্ডলেই আমাদের বেড়ে ওঠা। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনো মানুষ বাস করতে পারে না। সমাজে বাস করতে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। আমরা সবাই জানি মানব চরিত্রের দু’টি দিক রয়েছে—ভালো ও মন্দ। মানুষের মধ্যে যে দিকটি প্রাধান্য পায়, সে সেভাবেই খ্যাতি লাভ করে। মানুষ তার আচরণের মাধ্যমেই স্থান করে নেয় সবার অন্তরে এমনকি মৃত্যু পরবর্তী সময়েও মানুষের স্মৃতিতে সে বেঁচে থাকে।
আমাদের সমাজে কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আদব-কায়দা চর্চা নেই এটা বলা যাবে না। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে গিয়েছিলেন। দর্শক সারিতে সামনে বসা ছিলেন তার সাবসিডিয়ারি বিষয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রঙ্গলাল সেন। সভাস্থলে শেখ হাসিনা এসে ইতস্ততবোধ করছেন, তিনি কীভাবে তার জন্য সামনে রাখা বড় চেয়ারটিতে বসবেন। এজন্য তিনি অধ্যাপক সেনের অনুমতি চাইলেন এবং তারপর আসন গ্রহণ করলেন। তার বক্তৃতার শুরুতেও উল্লেখ করলেন, স্যারের সামনে কথা বলতে তিনি জড়তা বোধ করছেন। সাম্প্রতিক সময়েও সভামঞ্চে যখন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান কিংবা অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম অর্থাৎ তার কোনো শিক্ষক কেউ থাকেন তখন তিনি তাদের হাত তুলে সালাম জানিয়ে তারপর তার র্নির্ধারিত চেয়ারে বসেন। এটাই হচ্ছে আদব-কায়দা। দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকাল রাজনীতি, শিক্ষাঙ্গন অথবা সমাজের যে দিকেই তাকাই সব জায়গায়ই আদব-কায়দার অনুপস্থিতি চোখে পড়ে।
শিক্ষক মূলত শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করছেন এবং তাদের সামাজিক জীব হিসেবে গড়ে তুলছেন। এজন্য শিক্ষকের উচিত নিজেকে সেবক মনে করা। এটা ঠিক, কখনো কখনো দায়িত্বের কারণে কাউকে শাসন করতে হয়। যে কারণে-পিতা-মাতাও সন্তানদের শাস্তি দিয়ে থাকেন। এ শাসন ও শাস্তি দেয়ার সময় দায়িত্বশীলকে ভাবতে হবে, কর্তব্যের খাতিরে এই কাজ করতে হচ্ছে। এজন্য নয় যে আমি বড়। কোনো বাদশা যদি তার পাহারাদারকে দরজায় দাঁড় করিয়ে বলে দেন, অনুমতি ছাড়া কাউকে ভেতরে আসতে দেবে না। তখন যদি কোনো শাহজাদাও আসেন তাহলে ওই পাহারাদারের অধিকার আছে, তাকে ভেতরে ঢুকতে না দেয়া। এখানে পাহারাদার শাহজাদাকে বাধা দিচ্ছে এবং তার ওপর কর্তৃত্ব খাটাচ্ছে বিষয়টি এমন নয়। কর্তব্যের খাতিরেই শাহজাদাকে বাধা দিতে হচ্ছে। তেমনি শিক্ষকরা কর্তব্যের খাতিরেই শিক্ষার্থীদের শাসন করছেন। শেখ সাদী প্রার্থনা করেছিলেন, হে খোদা, তুমি আমাকে আদব শিক্ষা দাও, যেহেতু বেয়াদব তোমার অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জেনে রাখবে, অনেক বেশি কাজের চেয়ে অল্প আদব-কায়দা অনেক বেশি উত্তম। কোনো ব্যক্তি জ্ঞান দ্বারা মহৎ হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার জ্ঞানকে আদব দ্বারা সৌন্দর্যমণ্ডিত করবে।’
সামাজিক রীতি অনুযায়ী, আগত ব্যক্তির সম্মানে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়া আদব-কায়দার অংশ। সালাম পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা, আন্তরিকতা ও হৃদ্যতা সৃষ্টি করে। হাদিসে আছে ‘যখন তোমরা সালাম ও অভিবাদনপ্রাপ্ত হও, তখন তোমরা তার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর সম্ভাষণ কর। ‘তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।’ ‘বড়রা যখন কথা বলবে ছোটরা তখন শুনবে এবং প্রয়োজনে অনুমতি নিয়ে কথা বলবে।’ ‘অনুমতি না নিয়ে এবং সালাম না দিয়ে অন্য কারো ঘরে প্রবেশ করা অনুচিত।’ খাওয়া-দাওয়ার আদব বলতে সেই খাবার খাওয়াই যথেষ্ট যা দ্বারা নিজের পৃষ্ঠদেশ সোজা রাখা সম্ভব। খাওয়ার সময় পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবার খাওয়া, এক-তৃতীয়াংশ পান করা এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফাঁকা রাখা উচিত।
সন্তানদের উত্তম আদব-কায়দা ও স্বভাব-চরিত্র নিশ্চিত করতে মা-বাবাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে থাকেন এবং এটা তাদের পবিত্র দায়িত্ব। আমরা জানি আজকের শিশুরাই কালকের পিতা-মাতা। Charity begins at home-সবার আগে নিজের পরিবারকে সংশোধন করা উচিত। প্রবাদ আছে সন্তানকে বাস্তব অবস্থা শেখাতে পারাটা সবচেয়ে বেশি উপকারী এবং তার স্থায়িত্বও বেশি। ছোট শিশুটি কিন্তু খেয়াল করে তার মা-বাবা বা ভাই-বোন অথবা পরিবারের অন্য সদস্যরা কার সঙ্গে কীভাবে আচরণ করে। সন্তান যদি কোনো একটা অপছন্দনীয় কাজ করে থাকে বাবা-মা যদি সুন্দর আচরণ দিয়ে তা ম্যানেজ করতে পারেন তাহলে সেই সন্তানটিও জীবনে এইরকম অবস্থায় অস্থিরতার পরিচয় না দিয়ে ভালোভাবে তা ম্যানেজ করে নেবে। অনেক পরিবারে দেখা যায় কাজের পরিচারিকাটিকে পানি বা কোনো কিছু আনতে বললে একটু দেরি হলে সেই সন্তানটি ভয়ানক রাগ প্রকাশ করে, এটা কিন্তু সেই পরিচারিকার প্রতি পিতা-মাতার আচরণ থেকেই শেখা। কবি কালিদাস রায়ের লেখা ‘মাতৃভক্তি’ কবিতায় পড়েছি বায়েজিদ বোস্তামির অসুস্থ মা পুত্রের নিকট পানি পান করতে চেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। পুত্র মায়ের তৃষ্ণা মিটানোর জন্য পানির গ্লাস হাতে নিয়ে ভোর পর্যন্ত শিয়রে দাঁড়িয়েছিলেন। মা অসুস্থ বিধায় ঘুম থেকে জাগাননি। মা-ছেলের কী অসাধারণ মমত্ববোধ! পিতা-মাতা যদি সুন্দর আদর্শ বাস্তবে দেখাতে পারেন তাহলে সন্তানরা অনুরূপ আচরণ করবে এটাই স্বাভাবিক।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মাঝে মধ্যে বেড়াতে যাওয়ার অভ্যাস নিজেদের মধ্যে বন্ধন সুদৃঢ় করে। অনেককে দেখা যায়, বাইরে যাওয়ার সময় সন্তান হয়তো কম্পিউটারে মুভি দেখা বা গেম খেলার আবদার তুলে মা-বাবার সঙ্গে যেতে চায় না। বাবা-মা তা মেনে নিয়ে সন্তানদের রেখে চলে যান, এক সময় বড় হয়ে তারা আর যেতেই চায় না। সন্তানকে বুঝতে দিতে হবে, তাকে ছাড়া বাবা- মার বাইরে যেতে ভালো লাগে না। এমনভাবে পরিস্থিতি তৈরি করবেন যেনো সন্তান তার নিজের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরে পিতা-মাতার সঙ্গে যায়। এইভাবেই সম্পর্কের ভিত মজবুত ও সুন্দর হবে। ভালো কাজের জন্য সন্তানকে প্রশংসা ও পুরস্কৃত করলে সন্তানরা ভালো কাজে উৎসাহিত হয়। খেলাধুলায় উৎসাহদান দিয়ে শারীরিক ব্যায়াম বা নড়া-চড়া হয় এমন সব খেলার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে আনন্দ দেয়া উচিত।
শিশুর সুন্দর আচার-আচরণ গঠনে মূল ভূমিকা পালন করে পরিবার। শিশুরা হচ্ছে বাগানের ফুল। যে ব্যক্তি শিশুদের স্নেহ করে না, বড়দের সম্মান করে না, সৎ কাজের নির্দেশ দেয় না এবং অসৎ কাজে বাধা দেয় না সে ভালো মানুষ নয়। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়, তাদের প্রতিভা বিকাশ ও সুন্দর আচরণ শেখাতে হলে তার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করতে হবে। পরিবার থেকেই শেখাতে হবে বড়দের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হয়। ছোটদের কীভাবে ভালোবাসতে হয়, বড়দের শ্রদ্ধা ও ছোটদের ভালোবাসার শিক্ষা বাস্তবে করে দেখাতে হয়, শিশুরা তা খুব সহজেই গ্রহণ করবে। শিশুরা একটু বড় হলে তাদের আচার-আচরণে পরিবর্তন আসতে পারে। কোনো ভুল করলে প্রথমে বোঝাতে হবে, প্রয়োজনে শাসন করতে হবে। তবে শাসনের সময় অপমানজনক শব্দ ব্যবহার করা ঠিক নয়। বাসায় অতিথি আসলে তাদের সঙ্গে কথা বলতে ও সময় কাটাতে উৎসাহিত করতে হবেম, এতে ছোট থেকেই তার মধ্যে সামাজিকতাবোধ জেগে উঠবে। অনেক পিতা-মাতাকে দেখা যায় নিজের পরিবারের বাইরে খুব ভালো ও সুন্দর ব্যবহার করেন কিন্তু পরিবারের মাঝে তারা সেরূপ আচরণ করেন না, অথচ পরিবারের দাবি এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। পরিবারে সন্তানদেরও গুরুত্ব আছে এটা বুঝতে দেয়ার জন্য মাঝে মাঝে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যপারে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। নির্মল সুন্দর আচরণ না পেলে সন্তানরা মানসিকভাবে কষ্ট পেয়ে বড় হয় এবং পরে পিতামাতার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে দেখা যায়, যা অত্যন্ত দুখঃজনক। অনেক সময় পিতাকে মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে দেখে বা কোনো ক্ষেত্রে মাকে বাবার সাথে অপ্রত্যাশিত আচরণ করতে দেখেও শিশুরা তা অন্তরে ধারণ করে রাখে, সময়মতো সেটার প্রতিফলন ঘটায়। শিশুদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করলে তারা মাতা-পিতার নিকট কোনো কিছু লুকায় না। শিশুদের সঙ্গে সবসময় সত্য কথা বলতে হবে এবং তাদের সত্য বলতে উৎসাহিত করতে হবে। দিনের নির্দিষ্ট একটি সময় বেছে নিয়ে তাদের সঙ্গে গল্প করা, আনন্দ করা, পাড়া-প্রতিবেশীদের খোঁজ-খবর নেয়া। মোটকথা তাদের প্রতি মনোযোগ দেয়া উচিত।
লেখক: সাবেক মহাপরিচালক, নায়েম