ঢাকা শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫ , ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

ইসলামিক দৃষ্টিকোণে বাকস্বাধীনতা

মতামত

আবদুর রাকীব মাসুম

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ১৬ মে ২০২৫

সর্বশেষ

ইসলামিক দৃষ্টিকোণে বাকস্বাধীনতা

প্রতীকী ছবি

বাকস্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। বাকস্বাধীনতার অর্থ হলো স্বাধীনভাবে নিজের মত ও বক্তব্য প্রকাশ করতে পারা, যা অন্যের স্বাধীনতা কিংবা অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে না। বাকস্বাধীনতা না থাকলে সমাজে জুলুমের প্রসার হয়। মানুষের অধিকার খর্ব হয়। রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়। তাই ন্যায় ও মানবতার ধর্ম ইসলামে বাকস্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যখন পৃথিবীতে বাকস্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না, রাজা-বাদশাহ আর গোত্রপতিদের কথাই ছিলো চূড়ান্ত, তখন আপত্তি বা ভিন্নমত জানানোর সাহস কারো ছিল না। এমন সময় পৃথিবীতে আগমন করেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি মানুষকে আলোর পথ দেখালেন। সভ্যতা শিক্ষা দিলেন। তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করলেন।

ইসলাম মানুষকে মুক্তভাবে কথা বলার অধিকার দিয়েছে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে: সর্বোত্তম জিহাদ হলো জালেম বাদশার সম্মুখে সত্য কথা উচ্চারণ করা। (তিরমিজি শরিফ: ২১৭৪) 

নবীজি (সা.) মানুষের মতামতকে সম্মান করতেন। ধৈর‌্যর সঙ্গে তাদের কথা শুনতেন। গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয়ে তিনি সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। নবীজি (সা.)-এর ভাষ্য ও জীবনীতে বাকস্বাধীনতার অসংখ্য নজির রয়েছে।

ষষ্ঠ হিজরিতে নবীজি (সা.) মক্কার কাফেরদের সাথে এক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। এই চুক্তির কিছু ধারা বাহ্যিকভাবে মুসলমানদের জন্য অবমাননাকর ছিল। তাই সাহাবায়ে কেরামের পক্ষে তা মেনে নেওয়া কষ্টকর হচ্ছিল। তখন সবার পক্ষ থেকে হজরত উমর (রা.) নবীজির দরবারে উপস্থিত হয়ে বাদানুবাদ করেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি হকের উপর নই, আর তারা কি বাতিল নয়? নবীজি বললেন, অবশ্যই। হজরত উমর বললেন, আমাদের মৃতরা কি জান্নাতে আর তাদের মৃতরা কি জাহান্নামে যাবে না? নবীজি বললেন, অবশ্যই। তখন হজরত উমর বলেন, তাহলে কেন আমরা তাদেরকে দীনের ব্যাপারে ছাড় দেব? অথচ আল্লাহ এখনো আমাদের এবং তাদের মাঝে কোনো ফয়সালা করেননি। তখন নবীজি উত্তর দিলেন, হে খাত্তাবের পুত্র! নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহর রাসুল আর আল্লাহ আমাকে কখনো ধ্বংস করবেন না। (বুখারি শরিফ: ৩১৮২)

নবীজীবনের এমন অনেক ঘটনাই হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগ ছিলো বাকস্বাধীনতার স্বর্ণযুগ। হজরত আবু বকর (রা.) খলিফা হিসেবে তাঁর প্রথম ভাষণে বলেছিলেন, আমি যতক্ষণ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করি, ততক্ষণ আপনারা আমার আনুগত্য করবেন। আর যদি আল্লাহর রাসুলের অবাধ্যতা করি, তাহলে আপনারা আমার আনুগত্য করতে বাধ্য নন। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া: ৬/৩০৫) 

দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.) তাঁর বিখ্যাত ভাষণে বলেছিলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তোমরা আমার অংশীদার। তোমাদের উত্তম পরামর্শ দ্বারা আমাকে সাহায্য কর। আমি যদি আল্লাহ ও রাসুলের পথে চলি, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর। আর যদি বিপথগামী হই, আমাকে সংশোধন করো। তোমাদের পরামর্শ ও  মতামত দ্বারা আমাকে শক্তিশালী কর।

তাঁর সময়কালের বাকস্বাধীনতার নমুনা হিসেবে একটা ঘটনা উল্লেখ করা যায়। একবার মুসলমানদের মাঝে চাদর বণ্টন করা হলো। সবার ভাগে একটি করে চাদর পড়ে। জুমার দিন তিনি যখন খুতবা দিতে দাঁড়ালেন, তখন তাঁর গায়ে দুটি চাদর দেখতে পেয়ে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আমরা আপনার কথা শুনব না, যতক্ষণ না আমার কথার উত্তর দেবেন। আমরা সবাই পেয়েছি একটি চাদর, তাহলে আপনার গায়ে দুটি কেন? অর্ধ পৃথিবীর শাসক হজরত উমর তার দুঃসাহসী প্রশ্নে রেগে যাননি। মুখে হাসি রেখে বললেন, এই প্রশ্নের উত্তর আমার ছেলে আব্দুল্লাহ দেবে। তখন তাঁর ছেলে হজরত আব্দুল্লাহ দাঁড়িয়ে বললেন, আমার বাবা একটি চাদরই পেয়েছিলেন, তবে  আমি আমার চাদর তাঁকে দিয়েছি। তাই তিনি দুটি চাদর পরেছেন। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া)

এগুলো হচ্ছে ইসলামি ইতিহাসে বাকস্বাধীনতার চমৎকার কিছু দৃষ্টান্ত মাত্র। আধুনিক বিশ্বে পশ্চিমারা বাকস্বাধীনতার বুলি আওড়ায়, কিন্তু তাদের সে বাকস্বাধীনতার অর্থ বড়ই অদ্ভুত। পশ্চিমাদের নিকট বাকস্বাধীনতার অর্থ হলো অশ্লীলতা, নাস্তিকতা, সেক্যুলারিজম ও ইসলাম-বিরোধিতা। এসব ক্ষেত্রে যে যত বেশি অগ্রসর, পশ্চিমাদের চোখে সে তত বেশি প্রগতিশীল, মুক্তচিন্তার অধিকারী। বিপরীতে কেউ যদি ইসলামের পক্ষে কথা বলে কিংবা তাদের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে, সে পশ্চিমাদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়। তার কণ্ঠরোধ করার জন্য তারা উঠেপড়ে লেগে যায়। 

ইসলামে বাকস্বাধীনতার সংজ্ঞা পশ্চিমাদের থেকে ভিন্ন। ইসলামে বাকস্বাধীনতা তো রয়েছে, কিন্তু তা পশ্চিমাদের মত পক্ষপাতদুষ্ট নয়। অবাধ ও সীমাহীন নয়। বরং ইসলামে তার নির্দিষ্ট কিছু সীমারেখা রয়েছে। যেমন বাকস্বাধীনতা চর্চা করতে গিয়ে যেন গিবত বা পরনিন্দা না হয়ে যায়। মিথ্যা ও গুজবের আশ্রয় না নেওয়া হয়। ফিতনা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি উদ্দেশ্য না হয়। বাকস্বাধীনতার নামে খোদাদ্রোহিতা, ধর্মহীনতার চর্চা বা  অশ্লীলতার প্রসার ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। মানুষের অধিকার ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠাই ইসলামে মুখ্য বিষয়।

লেখক: মুহাদ্দিস, চন্দ্রা দারুল উলূম, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।

জনপ্রিয়