নওগাঁর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মৌদুদুর রহমান কল্লোলের ঘুষ বাণিজ্য, অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সোহেল রানা। মৌদুদুর রহমান কল্লোল বর্তমানে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ-এনায়েতপুর ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে, ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি উপ-সহকারী পদে যোগ দেন মৌদুদুর রহমান কল্লোল। পরে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনি যখন যে ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করেন তখন সেখানে গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। তার কাছে জমি খারিজ, খাজনা, নামজারিসহ ভূমি সংক্রান্ত যেকোনো কাজ করতে গেলেই দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা। আর চাহিদা মাফিক টাকা না দিলে হয় না কোনো কাজ। শিকার হতে হয় নানা হয়রানির।
জানা যায়, নওগাঁ শহরের স্টাফ কোয়াটারের বিপরীতে প্রায় ৩ কাঠা জমি ওপরে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল ৫ তলা বাড়ি। সেই জমির দাম প্রায় ৭০ লাখ টাকা। আর কয়েক কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল ভবন। এ ছাড়া সদর উপজেলার চকদেব মৌজায় ২৫ দশমিক ৩০৫ শতক জমি, যার দাম প্রায় ৩ কোটি টাকা। চকপ্রাচী মৌজায় আছে ৪১ দশমিক ৫ শতক যার দাম প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা। চকবাড়িয়া মৌজায় ৮ দশমিক ৩৫ শতক জমি যার দাম প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। খাগড়া মৌজায় রয়েছে ২৩৪ দশমিক ৫ শতক যার দাম প্রায় ৪ কোটি টাকা। বাঙ্গাবাড়িয়া মৌজায় রয়েছে ৮ দশমিক ২৫ শতক যার দাম প্রায় ১ কোটি টাকা। আরজি-নওগাঁ মৌজায় রয়েছে ১৭ দশমিক ৬৬ শতক জমি আছে যার দাম প্রায় ১ কোটি টাকা। এ ছাড়া শহরের নওজোয়ান টাওয়ারে তার স্ত্রীর নামে প্লট আকারে জমি রয়েছে যার দাম প্রায় ১৩ লাখ টাকা।
নওগাঁর সদর উপজেলার ফতেপুর বাজারের চা বিক্রেতা ভুক্তভোগী আলম হোসেন বলেন, ৪ শতক জমি খারিজ করতে গেলে কল্লোল তার কাছে থেকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে মাত্র ৩ শত টাকার চেক দিয়েছেন। কল্লোল যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন সামনে একটা কৌটা রাখতেন। সেই কৌটার মধ্যে টাকা ছেড়ে দিতে হতো। তারপর তিনি চেক দিতেন।
ইকরতাড়া এলাকার রাজু সরদার বলেন, ১০ শতক জমি খারিজ করতে আসলে ১৩ হাজার টাকা নিয়ে চেক দিয়েছে ১৮০ টাকার। টাকা বেশি নেয়ার বিষয়ে কিছু বললে খারিজ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন কল্লোল। শুধু আমি না যে কেউ তার কাছে জমির জন্য কোনো কাজে গেলে তার সঙ্গে এমন করতেন তিনি। এমন শত শত অভিযোগ রয়েছে কল্লোলের বিরুদ্ধে।
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সোহেল রানা বলেন, মৌদুদুর রহমান কল্লোলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত একজন সিনিয়র সহকারী কমিশনারের মাধ্যমে তদন্ত চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মৌদুদুর রহমান বলেন, এগুলো ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া আমার সম্পত্তি। আমি আপনার সঙ্গে পরে কথা বলবো।
উল্লেখ্য গত ১৮ আগস্ট তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা বরাবর স্মারকলিপি দেন নওগাঁর বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কল্লোলের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য, অনিয়ম আর সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তার বিচারসহ অপসারণ দাবি করেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে নওগাঁ পৌরসভা-চন্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা পদে কমর্রত মৌদুদুর রহমানকে গত ১৯ আগস্ট মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ-এনায়েতপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলি করা হয়।