‘আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশ শুধু ফ্যাসিস্টের কবলে পড়েনি, বাংলাদেশ এখন বর্ণবাদীদের কবলে পড়েছে। দেশটাকে তারা দুটো ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। একটা ভাগ হচ্ছে আওয়ামী লীগ, আরেক ভাগ হচ্ছে বিরোধী দল।’ গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
সরকারের বিরুদ্ধে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ ও ‘গোষ্ঠীতন্ত্রের’ অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সাম্প্রদায়িকতা এমন পর্যায়ে গেছে যে যারা বিএনপি করেন, তাদের ঘরবাড়ি পর্যন্ত দখল করে নেয়া হচ্ছে। তাঁদের জমি দখল করে নেয়া হচ্ছে, ব্যবসা দখল করে নেয়া হচ্ছে, তাঁদের ছেলেমেয়েদের চাকরির কোনো সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এমনকি দূরসম্পর্কের আত্মীয় যাঁরা আছেন, তাঁদেরও চিহ্নিত করে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা ‘বর্ণবাদ’ ছাড়া কিছু নয়। এই অবস্থা তৈরি করে তারা নিজেরাই ‘সাম্প্রদায়িক’ অবস্থা তৈরি করছে।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আওয়ামী লীগীকরণ ছাড়া এবং তাদের নিজস্ব লোকজন ছাড়া তারা কাউকে কোথাও দাঁড়াতে দেয়নি। সবক’টা প্রতিষ্ঠান তারা দলীয়করণ করে ধ্বংস করেছে।
বিএনপির মহাসচিব স্বাধীনতা দিবসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তারা আবার দাবি করে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে তাদের নাকি এই জিহাদ অব্যাহত থাকবে। যারা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে, যারা নিজেরা গোষ্ঠী তৈরি করছে, বর্ণবাদ তৈরি করছে, তাদের মুখ এ কথা শোভা পায় না।
দুর্নীতি, দুঃশাসনে দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা চরম দুরবস্থায় পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্বেচ্ছাচারিতা, বিভিন্ন রকম অসামাজিক কার্যকলাপ ছাড়া আর কিছু হচ্ছে না। সেখানে নিয়োগ হচ্ছে দলীয়করণের মাধ্যমে। যাদের যোগ্যতা নেই, তাদের ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এমনকি প্রাইমারি স্কুলেও এখন দলীয় ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের স্বাধীনতাযুদ্ধের ঘোষণা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দিয়েছিলেন—এ দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ ব্যাপারে কোনো বিতর্ক হতে পারে না। কারণ, সেটাকে বিতর্কিত করতে গেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকে বিতর্কিত করতে হবে। আজকে যারা এটা করছে, তারা মূলত স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি নয়। তিনি মন্তব্য করেন, জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়েই সেদিন একটি দিশাহারা জাতি দিশা খুঁজে পেয়েছিলো এবং যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছে। মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে আওয়ামী লীগ বরাবরই গণতন্ত্রবিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে তারা তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের পর তারা ক্ষমতায় ছিলো। তাদের নেতৃত্বে সেদিন যে সংবিধান রচিত হয়েছিলো, সেই সংবিধান তারাই কেটেকুটে একদলীয় শাসন বাকশাল করেছিলো। দুঃখ হয়, তাদের সেই অবিসংবাদিত নেতা, তার হাত দিয়ে সেদিন ১১ মিনিটে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল কায়েম হয়েছিলো। সেই দল আবারো একই কায়দায় ছদ্মবেশের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।