ঢাকা সোমবার, ১৯ মে ২০২৫ , ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

নতুন শিক্ষাক্রমে শিখনকালীন মূল্যায়ন 

মতামত

মো. আইয়ুব আলী 

প্রকাশিত: ০০:০০, ৯ অক্টোবর ২০২৩

সর্বশেষ

নতুন শিক্ষাক্রমে শিখনকালীন মূল্যায়ন 

আমরা সেই কারিকুলাম বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি যেখানে চোখের সামনে দুর্ঘটনা দেখে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ক্লাসের প্রথম বেঞ্চের ছাত্রের বিপরীতে পেছনের বেঞ্চের ছাত্রটি যখন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যান, তার সেই গুণটাকেও মূল্যায়নের আওতায় আনা।  

নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা নেই এই কথাগুলো বিভিন্ন শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বলতে শোনা যাচ্ছে। তারা বলছেন, নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা নেই,  বাচ্চারা বাসায় পড়তে বসে না ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে কি পরীক্ষা নেই? না আমরা শিক্ষক সমাজ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নতুন কারিকুলামের অন্তর্নিহিত মূলভাব সম্পর্কে অবগত করাতে সক্ষম হয়ে উঠিনি। 

নতুন শিক্ষাক্রমে শিখনকালীন মূল্যায়নের মাধ্যমে সারা বছরই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। যেখানে পূর্বের তুলনায় পরীক্ষা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন শিখনকালীন মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা আসলে কী সে সম্পর্কে আলোকপাত করা যাক। শিখনকালীন মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ওই সকল মানবীয় গুণাগুণ ও খুটিনাটির পারদর্শিতা রেকর্ড করা হয়, যার সাহায্য নিয়ে ভবিষ্যতে উদ্ভিদবিদ্যা বা প্রাণিবিদ্যায় পড়ালেখা করে আর যেনো ব্যাংকে চাকরি করতে না হয় অথবা যে বিষয়ে শিক্ষার্থীর আগে থেকেই দুর্বলতা ছিলো বা যে বিষয়টি বুঝতেন কম অথচ উচ্চশিক্ষায় গিয়ে ওই বিষয়েই পড়তে হচ্ছে। এই ধরনের অনেক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে নতুন কারিকুলাম সহায়তা করবে। 

আমরা জানি, প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাঝে কোনো না কোনো বিশেষ গুণ লুকায়িত আছে, যেটিতে সে পারদর্শী। একটু গাইড লাইন দিলেই সে তার দক্ষতা দেখাতে সক্ষম হবে। নতুন কারিকুলাম শিক্ষর্থীর ওই গুণগুলো খুঁজে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। একজন শিক্ষার্থীকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে সারা বছর PI (Performance Indicator) ও BI (Behavioral Indicator) এর সাহায্যে বিভিন্ন পারদর্শিতার মাত্রা যেমন-যোগাযোগ দক্ষতা, ভাষা দক্ষতাসহ শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সক্রিয়তা, সাংগঠনিক দক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ দক্ষতা ইত্যাদি এবং আচরণিক মাত্রা যেমন-সততা, সাহস, সহনশীলতা, পরম সহিষ্ণুতা, দায়িত্বশীলতা, জেন্ডার সচেতনাতা ইত্যাদির মাত্রা রেকর্ড করা হয় এবং সামষ্টিক ও শিখনকালীন মূল্যায়নের সমন্বয়ে তৈরি ট্রান্সক্রিপ্ট দেয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি যাচাই করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতি শ্রেণি শেষে শিক্ষার্থীর সবল ও দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যায়। যেমনটি আমরা অনেকেই ‘Like Stars on Earth’ শিশুতোষ সিনেমায় দেখেছি আমির খান কীভাবে একজন শিক্ষার্থীর দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। 

এভাবে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পারদর্শিতা ও আচরণিক মাত্রার রেকর্ডগুলো ব্যানবেজ কর্তৃক প্রতিটি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ডাটাবেজ সম্বলিত ইউনিক আইডির বিপরীতে জমা হবে। এই পাঁচ বছরের সংগৃহীত ডাটাগুলোর সারসংক্ষেপই বলে দেবে উক্ত শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার গড়তে কোন বিভাগে বা কোন বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করলে তিনি সফলতার শিখরে পৌঁছাতে পারবেন। উচ্চশিক্ষায় পড়ার বিষয়টা যদি হয় তার পূর্বের পছন্দের বিষয় তাহলে পড়াটাকে আর চাপ মনে হবে না বরং পড়াটা হবে আনন্দের এবং বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করে উচ্চতর গবেষণায় আগ্রহী হবে। থ্রি-ইডিয়েট সিনেমা আমরা কমবেশি অনেকেই দেখেছি যেখানে সিনেমার নির্মাতা আমির খানের মাধ্যমে মূলত এই বিষয়টাকেই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন এবং সেখানে দেখানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা প্রতিযোগিতামূলক না হয়ে হবে আনন্দের সঙ্গে।  

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক (গণিত) জকিগঞ্জ, সিলেট 

জনপ্রিয়