
স্বাস্থ্যসেবা খাতে একজন ফার্মাসিস্টের গুরুত্ব কোনোভাবেই অস্বীকার করার সুযোগ নেই। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ প্রদান, সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রোগীকে ওষুধ ব্যবহারের সঠিক নির্দেশনা দেয়ার দায়িত্বও বহন করেন একজন ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট।
অথচ দেশের হাজার হাজার ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট আজও ১০ম গ্রেড থেকে বঞ্চিত—যেখানে সমমানের অন্য পেশাজীবীরা অনেক আগেই সেই অবস্থানে পৌঁছে গেছেন।
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী নার্স, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদদের ইতোমধ্যে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টদের গ্রেড আজও ১১তেই আটকে আছে। এটি শুধু একটি অর্থনৈতিক বৈষম্য নয়, বরং এটি পেশাগত মর্যাদা এবং নৈতিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রেও চরম অবহেলার প্রতিফলন।
বাংলাদেশে ফার্মেসিতে ডিপ্লোমা কোর্সও এখন অন্যান্য কারিগরি শিক্ষার মতো চার বছর মেয়াদি। একটি শিক্ষার্থীকে একই মেয়াদে ল্যাব-ভিত্তিক, ক্লিনিক্যাল ও কমিউনিটি ওষুধ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিতে হয়। তাই নার্সিং, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং বা কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার সঙ্গে এটি কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই, বরং পেশাগত দিক থেকে আরো বেশি সংবেদনশীল ও দায়িত্বপূর্ণ।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টদের ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার জন্য প্রস্তাব অনেক আগেই হয়েছিলো। সেই ফাইল বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঝে বছরের পর বছর ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে।
অথচ অন্য পেশাজীবীদের গ্রেড উন্নীতকরণের প্রক্রিয়া অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে। এখন এই প্রশ্ন তাই স্বাভাবিক: ফার্মাসিস্টরা কি সরকারি কাঠামোতে অবহেলার শিকার?
বাংলাদেশে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তাদের পেশাগত দক্ষতা প্রশ্নাতীত। কিন্তু তারা যখন একই শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ থাকার পরও সমান মর্যাদা পাচ্ছেন না, তখন সেটি রাষ্ট্রের নীতিগত ব্যর্থতা হিসেবেই চিহ্নিত হয়।
সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি ফাইল-জটিলতা ও আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করে অবিলম্বে ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টদের ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ফার্মাসিস্টদের অবদানকে সম্মান জানাতে হলে, প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে তাদের ন্যায্য মর্যাদা নিশ্চিত করা।
লেখক: ফার্মাসিস্ট, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ী
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)