
দুঃখ কিংবা সুখে সব সময় যিনি পাশে থাকেন নিঃস্বার্থভাবে তিনি হচ্ছেন মা। মায়ের তুলনা শুধুই মা। মাকে ভালবাসতে আর শ্রদ্ধা নিবেদন করতে কোনো দিনক্ষণের প্রয়োজন হয় না। তবু মায়ের প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় মা দিবস। মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালিত হয় বিশ্ব মা দিবস। যুগে যুগে কবি লেখকরা মাকে নিয়ে লিখেছেন হাজারো গল্প কবিতা উপন্যাস প্রবন্ধ।
মায়ের তুলনা শুধুই মা। সবাই ভুলে যেতে পারে, দূরে সরে যেতে পারে সময়ের ব্যবধানে। কিন্তু মা কোনো অবস্থাতেই সন্তানকে ছেড়ে যায় না, আগলে রাখে অকৃত্রিম ভালবাসায়, পরম মমতায়।
মায়ের জন্য কোনো দিবসই যথেষ্ট নয়। তবু মা দিবস পালিত হয় বিশ্বব্যাপী। মা দিবসের ইতিহাস খুঁজলে নানা তথ্য বেড়িয়ে আসে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় মা দিবসের সূত্রপাত প্রাচীন গ্রীসের সিবেলের আরাধনা, রোমান দেবী জুনোর আরাধনা এবং ইউরোপ আফ্রিকা ও যুক্তরাজ্যের মাদারিং সানডের মতো বেশ কিছু অনুষ্ঠান। অন্য ইতিহাস মতে প্রাচীন গ্রীসে যেখানে প্রতি বসন্তকালে একটি দিন দেবতাদের মা ক্রোনাসের সহধর্মিণী রিয়ার উদ্দেশে মা দিবস উদযাপন করা হতো। যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবসের সূচনা হয় আমেরিকার সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড হোই নাম্নী এক নারীর হাত ধরে। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকার গৃহযুদ্ধে পৈশাচিকতা মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে জুলিয়া শান্তির অন্বেষায় একটা ঘোষণাপত্র লেখেন যা ‘মাদার্স ডে প্রোক্লেমেশন’ নামে পরিচিত ছিলো। এরপর যুদ্ধ শেষে অনাথদের সেবা আর একত্রকরণের কাজে নিয়োজিত হন মার্কিন সমাজকর্মী আনা রিভিস জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মেরী জার্ভিস। তখন তারা জুলিয়া ঘোষিত মা দিবস পালন করতে শুরু করেন। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ মে আনা বিবিসি জার্ভিস মারা গেলে মেয়ে আনা মেরী জার্ভিস মায়ের সম্মানে সরকারি ভাবে মা দিবস পালনের প্রচারণা চালান। এর তিন বছর পর ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মে পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় আন্দ্রেউজ মেথডিস্ট এপিসকোপান চার্চে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রথম মা দিবস পালিত হয়। আনা রিভিস জার্ভিস সাদা কারনিশনের ফুল বেশি ভালবাসতেন। নিজের মা এবং সব মায়েদের সম্মানে চার্চে উপস্থিত চার্চে উপস্থিত সব মায়েদের সাদা কারনেশন ফুল উপহার দেন মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে আনা মেরি জার্ভিস ‘মাদার্স ডে ইন্টারনেশনাল অ্যাসোসিয়েশন’ গড়ে তোলেন। আনা মেরি জার্ভিস এ দিনটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে ব্যাপক প্রচারণা চালান। শেষে ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববার কে মা দিবস এবং জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে সরকারি ভাবে মা দিবস পালিত হতে থাকে। এক সময় মা দিবস পালন বাণিজ্যিক হয়ে উঠলে আনা মেরি জার্ভিস এর প্রতিবাদ করে গ্রেফতার হন এবং নিজের সমস্ত সম্পদ ব্যয় করেন। প্রকৃত পক্ষে আনা মেরি জার্ভিসকেই মা দিবসের সত্যিকারের প্রতিষ্ঠাতা বলে গণ্য করা হয়। বিশ্বের সব মা থাকুক শ্রদ্ধা, সম্মান আর সন্তানের ভালবাসায় ।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক