
‘আধ পিঠ খাইলো মায়ের গুয়ে আর মুতে, আধ পিঠ খাইলো দারুণ মাঘ মাস্যা শীতে।..বিদেশ বিবাসে যদি পুত্র মারা যায়, দেশে না জানিবার আগে জানে কেবল মায়’। (মৈমনসিংহ গীতিকা)
পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় ব্যবহৃত ‘মা’ ডাকের শব্দগুলোর উচ্চারণগত সাদৃশ্য কীভাবে ঘটলো তা এক বিরাট রহস্য। ভাষাবিদদের মতে, শিশুরা যখন তার মায়ের দুধ পান করে, তখন তারা তাদের মুখভর্তি অবস্থায় কিছু শব্দ করে। ওই শব্দগুলো নাক দিয়ে বের হয় বলে উচ্চারণগুলো অনেকটা ‘ম’-এর মতো শোনায়। তাইতো অনেক ভাষায়ই ‘মা’ ডাকে ব্যবহৃত শব্দগুলো ‘ম’ বা ‘গ’ দিয়ে শুরু। যেমন জার্মান ভাষায় ‘মাট্টার’, ওলন্দাজ ‘ময়েদার’, প্রাচীন মিশরীয় ‘মাত’ ইতালিয়ান ‘মাদর’, ইংরেজি ‘মাদার’ চীনা ‘মামা’, হিন্দি বাংলা আফ্রিকান ভাষায় ‘মা’ একথার বড়ো উদাহরণ।
মায়ের প্রতি ভালবাসা ও সম্মানের স্মারক মা দিবসের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। বর্তমানে প্রচলিত মা দিবসের সূচনা ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এক স্কুলশিক্ষিকা অ্যানা জারভিস সেখানকার পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা দেখে মর্মাহত হয়ে মায়ের জন্য বিশেষ দিন পালনের কথা ভাবলেন। তার সে ভাবনা বাস্তবায়নের আগেই ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে অ্যানা এম জারভিস মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশে কাজ শুরু করেন। বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে তার মা ফিলাডেলফিয়ার যে গির্জায় উপাসনা করতেন, সেখানে সব মাকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা দিবসের সূচনা করেন। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মায়েদের জন্য উৎসর্গ করে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।
মা দিবসের উদ্দেশে মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা। অথচ বর্তমানে ফিলিস্তিনি ভাইয়েরা কোনো দিবস পালনের মতো অবস্থায় নেই। গাজায় যুদ্ধ শুরুর ৯ মাসে সেখানে ৫০ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। ফিলিস্তিনের হাজার হাজার মা শূন্য হাতে বসে মৃত্যুর দিন গুনছেন। হাজার হাজার শিশুর কান্না থেমে গেছে মায়ের মৃত্যুশোকে। অনেক মা তার সন্তানকে দেখাতে পারেননি দুনিয়ার আলো। অনেকে নিজের নাড়িছেঁড়া সন্তানকে পৃথিবীর বুকে নিয়ে এসেছেন, যারা মিসাইলের আলো দেখে বড়ো হচ্ছে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর আশঙ্কা মাথায় নিয়ে।
বাংলাদেশেও প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস পালিত হয়। দিবসটির প্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে তা হয়ে যাচ্ছে বাণিজ্যিক বিনোদন সর্বস্ব করপোরেট কালচার।
হাদিসে আছে, প্রিয়নবীর (স.) কাছে এক সাহাবি জানতে চাইলেন আমার ওপর কার অধিকার সবচেয়ে বেশি? তিনি (স.) বললেন- ‘তোমার মায়ের’। এভাবে তিনবার প্রশ্ন করলে তিনবারই তিনি উচ্চারণ করেন মা। চতুর্থবার তিনি (স.) উচ্চারণ করেন বাবা। হাদিসের ভাষায় ‘জননী’- যার পদতলে স্বর্গোদ্যান। কিন্তু জননীকূলের অনেকের অবস্থা খুবই অসহায়, এরা পারিবারিক পরিবেশে নিগৃহীত, অবহেলিত, নির্যাতিত এবং এদের অনেকে ‘সন্তান পরিত্যক্তা’ যাদের হাহাকার সীমাহীন। অথচ আজ যারা অসহায় পরিত্যক্তা তারাই জীবন-যৌবন সর্বস্ব সন্তানের জন্য লুটিয়ে দিয়েও নিদানের কালে বড়ই একা ও অপাঙতেয়।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর