
এক-একটির বয়স নাকি ৬০ লাখ বছর। কোনোটিকে হাতের মুঠোয় বন্দি করা যায়। কোনোটি উচ্চতায় সাড়ে ৪ মিটার। দেখতে যেনো পাথুরে বুদবুদ। রোমানিয়া জুড়ে এ ধরনের অসংখ্য পাথর ছ়ড়িয়ে রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, বুদবুদের মতো দেখতে এই পাথরগুলো প্রতি হাজার বছরে সর্বোচ্চ ২ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কারো আবার দাবি, প্রতি ১২০০ বছরে ৪-৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়।
এতো বছর ধরে বৃষ্টি পড়ার জেরে নাকি পাথরের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে। পাথরের ক্ষয় হতে পারে। সেগুলো কীভাবে বৃদ্ধি পায়? তবে কি এই পাথরগুলোতে প্রাণ রয়েছে? স্থানীয়দের অন্তত তেমনই দাবি। এমনও হয় নাকি? এমনতরো নানা প্রশ্ন নিয়ে পাথরগুলো দেখতে রোমানিয়ায় ভিড় করেন পর্যটকেরা।
রোমানিয়ার এই পাথরগুলোর একটি গালভরা নামে রয়েছে। এক-একটি পাথরকে ‘ট্রোভ্যান্ট’ নামে ডাকা হয়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি হলো জার্মান শব্দ ‘স্যান্ডস্টাইনকনক্রেশনেন’-এর সমনাম। যার অর্থ সিমেন্ট দিয়ে জোড়া বালুকণা।
কসটেস্টি নামে রোমানিয়ায় একটি ছোট গ্রামে মূলত এ ধরনের অংসখ্য পাথর দেখতে পাওয়া যায়। সে দেশের রাজধানী বুখারেস্ট থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই গ্রামটি। ওই গ্রামের পাশাপাশি রোমানিয়ার অন্তত ২০টি জায়গাতেও এমন পাথর ছড়িয়ে রয়েছে।
জিয়োলজিক্যাল ইনস্টিটিউট অফ রোমানিয়ার সঙ্গে যুক্ত মিরসিয়া টিকলিয়ানু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘মেল অনলাইন’কে বলেন, রোমানিয়ায় নানা বয়সের ট্রোভ্যান্ট রয়েছে। মাটি থেকে এগুলোর উৎপত্তি হয়নি। প্রাকৃতিক কারণে বিভিন্ন ভৌগোলিক সময় এগুলো তৈরি হয়ে গিয়েছে। কতোগুলিকে আবার বালির খাদেও দেখা যায়।
টিকলিয়ানু আরো বলেন, রোমানিয়ার ভৌগোলিক সাহিত্যে সর্বপ্রথম ‘ট্রোভ্যান্ট’ শব্দের ব্যবহার দেখা গিয়েছিল।
প্রায় গোলাকার বা অর্ধবৃত্তাকার এই ট্রোভ্যান্টগুলো আসলে বালুকণার আস্তরণে ঢাকা বেলেপাথর। যা পাথরের উপরে ঢাকনার মতো আস্তরণ তৈরি করেছে।
বৈজ্ঞানিকদের দাবি, প্রায় ৬০ লাখ বছর আগে ভূমিকম্পের জেরে ট্রোভ্যান্টগুলো তৈরি হয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে সেগুলোর ওপর বালি, পাথরের আস্তরণ জমা পড়েছে। সেগুলোকে আঠার মতো জুড়ে রেখেছে চুনাপাথরের আস্তরণ।
বৈজ্ঞানিকদের আরো দাবি, শত সহস্র বছর ধরে ভারী বৃষ্টির জেরে ট্রোভ্যান্টের উপরিভাগের আস্তরণ ভেদ করে পানি ঢুকেছে। ধীরে ধীরে তা পাথরগুলোর উপরে জমা হতে শুরু করেছে। যদিও এই প্রক্রিয়াটি ঠিক কী ভাবে হয়, তা বিশদে জানাননি তাঁরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টির জলে থাকা খনিজ পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়ায় ট্রোভ্যান্টের ভেতর অত্যধিক চাপ তৈরি হয়। যার জেরে পাথরগুলি ফুলেফেঁপে বহু গুণ হয়ে ওঠে। যেন সেগুলোর বৃদ্ধি হয়েছে।
পাথরগুলোকে কাটার পর সেগুলোর মধ্যে গাছের গুঁড়ির মতো বৃত্তাকার রিং দেখা গেছে। সেগুলোর প্রতিটিই পাথরগুলোর বয়স জানান দেয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ট্রোভ্যান্টগুলোর চেহারায় বদল দেখা গেছে। বৈজ্ঞানিকদের মতে, এগুলোকে সে অর্থে ‘জীবন্ত’ বলা যায় না। তবে স্থানীয় বা পর্যটকেরা এগুলোকে ‘জীবন্ত’ বলেই বর্ণনা দেন।
রোমানিয়ার কার্পাথিয়ান এলাকায় এমন অসংখ্য পাথরের দেখা মিললেও ট্রোভ্যান্টগুলো দেখতে কসটেস্টি গ্রামেই কেন ভিড় হয়?
আসলে ওই গ্রামের ট্রোভ্যান্টগুলো রোমানিয়ার অন্যান্য জায়গার পাথরের তুলনায় আকারে বড়। কোনোটি গোলাকার, কোনোটির আবার আকৃতি ডিম্বাকার। অনেকগুলো পাথরের পাশে আবার সেটির ‘যমজ’ ট্রোভ্যান্ট দেখা যায়।
কসটেস্টি গ্রামের ট্রোভ্যান্টগুলোর আরও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বৃহদাকার পাথরগুলোর পাশে ছোট আকারের পাথরও চোখে পড়ে। সেই পাথরগুলোর গায়ে ছোট ছোট গোলাকার কাঁটার মতো অজস্র অংশ দেখা যায়।
বড়সড় ট্রোভ্যান্টের পাশে পড়ে থাকা এ ধরনের ছোট আকারের পাথরগুলোর গায়ে যেন অসংখ্য বালুকণা, নুড়ি আটকে রয়েছে। সূত্র: আনন্দবাজার