
‘মঙ্গল’ অভিযানে যেতে চলেছেন কানাডার বাসিন্দা কেলি হ্যাস্টন। পেশায় জীববিজ্ঞানী। মঙ্গলাভিযানে যাওয়ার জন্য পৃথিবীতেও এক বছর ‘মঙ্গলে’ থাকবেন তিনি।
জুনের শেষে, কেলি-সহ আরও চার জনকে টেক্সাসের হিউস্টনের একটি জায়গায় রাখা হবে। যা তৈরি হয়েছে মঙ্গল গ্রহের আদলে। সেই জায়গার পরিবেশ এবং আবহাওয়াও মঙ্গল গ্রহের মতো। আগামী এক বছরের জন্য ওই বিশেষ স্থান হতে চলেছে কেলিদের ‘ঘর’।
৫২ বছর বয়সি কেলি বলেছেন, আমরা সত্যিকারের মঙ্গলে যাচ্ছি না। শুধু আমাদের মঙ্গলে থাকার অনুভূতি দেওয়া হবে।
কেলি জানিয়েছেন, তিনি ছোটবেলায় কোনও দিন স্বপ্নেও ভাবেননি যে কখনও মঙ্গলে যাবেন। শুধু যাবেনই না, সেখানে এক বছর বসবাসও করবেন। তাঁর কথায়, এখনও মাঝেমাঝে আমার কাছে সব কিছু অবাস্তব মনে হয়েছে।
দীর্ঘ দিন লাল গ্রহে থাকার প্রস্তুতি নিতে দীর্ঘ অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে কেলিদের।
নাসার তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গল গ্রহের পরিবেশের আদলে তৈরি এই স্থান দীর্ঘমেয়াদি কয়েকটি পরীক্ষার অংশ। ভবিষ্যতে বাস্তবের মঙ্গল অভিযানের আগে এই পরীক্ষাগুলি সফল হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি, এই পরীক্ষায় কোনো বিরূপ ফলাফল পাওয়া গেলে আগে থেকেই মঙ্গল অভিযানের বিষয়ে সতর্ক থাকা যাবে।
নাসা জানিয়েছে, কেলিসহ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ওই জায়গায় খুবই কষ্ট করে থাকতে হবে। জীবনযাপনের সব রকম সরঞ্জাম তাঁরা পাবেন না। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির সরবরাহও থাকবে না নাসার তৈরি করা এই বিশেষ জায়গায়।
এই এক বছর বহির্বিশ্বের সঙ্গে কেলিদের সব যোগাযোগ বন্ধ থাকবে। মঙ্গলের দিন-রাতের হিসাবেই সেখানে জীবন কাটাতে হবে তাঁদের। এই প্রসঙ্গে কেলি বলেন, ‘আমি পুরো বিষয়টি নিয়ে খুব উত্তেজিত। এটা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জের মতো।
হিউস্টনে কেলিদের নতুন বাসস্থানের নাম মার্স ডুন আলফা। তৈরি হয়েছে থ্রিডি প্রিন্ট দিয়ে। ১৭০০ বর্গফুটের এই বাসস্থানে শয়নকক্ষ, একটি জিম, একটি চলাফেরার জায়গা এবং চাষ করার খামার ছাড়া আর কিছু নেই।
সাক্ষাৎকারে কেলি বলেছেন, ‘কেউ যখন মার্স ডুন আলফার ভেতরে যাবে, তাঁর অদ্ভুত অনুভূতি হবে। ওই বাসস্থানে যে চলাফেরার জায়গা রয়েছে, সেখানে আমরা মঙ্গলগ্রহে কী ভাবে হাঁটতে হয় তা শিখব।মার্স ডুন আলফা লাল বালিতে ভরা এবং মোটা কাপড়ে ঢাকা। সেখানে তাঁদের মঙ্গলে থাকার মতো উপযুক্ত পোশাক দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন কেলি। কেলি ছাড়াও এই বিশেষ মঙ্গলাভিযানে এক জন ইঞ্জিনিয়ার, এক জন চিকিৎসক এবং এক জন নার্স রয়েছেন। তবে আগে থেকে তাঁরা একে অপরকে চিনতেন না। কেলি জানিয়েছেন, পরিচয় হওয়ার পর থেকে তাঁরা নিয়মিত একে অপরের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। কী ভাবে তাঁরা কাজ ভাগ করে নেবেন, তা নিয়েও তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
মার্স ডুন আলফায় প্রবেশের আগে হিউস্টনে আলাদা করে কেলিদের এক মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
অভিযানে গিয়ে তাঁরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইমেল মারফত যোগাযোগ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কেলি। ভিডিয়ো কলের সুযোগ থাকলেও তা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া পাওয়া যাবে না। আমেরিকা ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দে মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। আর তার জন্যই এই সব আগাম প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন নাসা। তবে বাস্তবের মঙ্গল অভিযানে কেলি যাবেন কি না, সে বিষয়ে নাসার তরফে কিছু জানানো হয়নি।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা