
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন আইবাস ডাবল প্লাস সফটওয়্যারের ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারে (ইএফটি) দিতে এবার পদ্ধতির পরিবতর্ন আনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রতিমাসে শিক্ষক-কর্মচারীদের তালিকা অনলাইনে সাবমিট করবেন। সে অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ইএমআইএস সেল ডেটা কনসুলেট করবে। এর পরে হিসাব তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রস্তাব অনুমোদনের পর সরকারি নির্দেশ (জিও) জারির পর শিক্ষক-কর্মচারীদের হিসেবে টাকা যাবে। এই উদ্যোগের ফলে সাময়িক বরখাস্ত, মারা যাওয়া ও বেতন বন্ধ থাকা শিক্ষকরা আর ঢালাওভাবে পুরো মাসের বেতন পাবেন না।
সোমবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা আমাদের বার্তাকে এ তথ্য জানিয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইবাস ডাবল প্লাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে বেতন দিলে ঢালাওভাবে সাময়িক বরখাস্ত, মারা যাওয়া ও বেতন বন্ধ থাকা শিক্ষকদের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যায়। এটার জন্য পরিবর্তন।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক ধরনের অচলাবস্থা শুরু হয়। কোনো শিক্ষক ক্লাসে না গিয়েও বেতন নিচ্ছেন আবার কোনো শিক্ষক ক্লাসে যেতে পারছেন না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পদত্যাগে বাধ্য হওয়া বা হেনস্তার শিকার শিক্ষকদের বেতন চালু রাখতে ও যারা প্রকৃত দোষী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কয়েক ধাপে আদেশ দিলেও তারা বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা গেছে।
অপরদিকে যে সব শিক্ষক প্রকৃত দোষী বা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দোষী সাব্যস্ত শিক্ষকদের নাম ইএফটির আইবাস ডাবল প্লাস সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তাদের পুরো মাসের বেতন চলে যাচ্ছে অ্যাকাউন্টে। ফলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমন ক্ষতি এড়াতেই এবার বেতন দেয়ার পদ্ধতিতে পরবর্তন আনা হয়েছে।
এদিকে জানা গেছে, ইএফটিতে এমপিও শিক্ষকদের বেতন দেয়ার অংশ হিসেবে ডিসেম্বরের ৭ম ধাপ, জানুয়ারির ৪র্থ ধাপ, ফেব্রুয়ারির ৩য় ধাপ ও মার্চের ২য় ধাপের বেতনের প্রস্তাব শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এই কার্যক্রম আরো আগে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা টেকনিক্যাল কারণে বিলম্ব হয়েছে। এসব ধাপের বেতন ছাড়ের পর এপ্রিলের বেতন নিয়ে কাজ শুরু হবে। [inside-ad-2]
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এপ্রিলের বেতন নিয়ে এখনো কাজ শুরু হয়নি। ডিসেম্বরসহ চার ধাপের বেতন ছাড় হওয়ার পরে এপ্রিলের বেতন নিয়ে কাজ শুরু হবে। চার ধাপের বেতনে বিলম্ব হওয়ার কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা বলছেন, টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে এসব ধাপের বেতন ছাড়ে দেরি হচ্ছে।
আশাকরি এ চার ধাপের বেতনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর তা অনুমোদন দিলেই বেতন ছাড়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর আগে গত ২৭ মার্চ ডিসেম্বরের ষষ্ঠ ধাপের প্রস্তাব অনুমোদন হয়।
জানা গেছে, ডিসেম্বরের সপ্তম ধাপের বেতনের প্রস্তাব দুই সপ্তাহ আগে মন্ত্রণালয়ে যাওয়া কথা ছিলো। কিন্তু তা ডিসেম্বরসহ চার ধাপের বেতন ছাড় হওয়ার পরে এপ্রিলের বেতন নিয়ে কাজ শুরু হবে।
সূত্র জানায়, তথ্য সংশোধন করেছেন এবং প্রোফাইল আপডেট করেছেন তারা সপ্তম ধাপে রয়েছেন। এ ছাড়াও ধষ্ঠ ধাপের কিছু শিক্ষক-কর্মচারী বাদ পড়েছিলেন তারাও সপ্তম ধাপে রয়েছেন। এই দুই ধাপের কাজ শেষে ঈদের বেতন ও উৎসব ভাতা নিয়ে কাজ শুরু করবেন কর্মকর্তারা। এখনি এ ব্যাপারে ঈলের বেতন ও উৎসব ভাতা নিয়ে কিছু বলছেন না তারা। এর আগে ২৭ মার্চ ষষ্ঠ ধাপের বেতনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, সরকারি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পান। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে ছাড় হলেও তা রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে অ্যানালগ পদ্ধতিতে ছাড় হতো। এই অর্থ তুলতে শিক্ষকদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হতো।
ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বেতন-ভাতা ছাড়ের জন্য কয়েক পর্যায়ে অনুমোদনসহ সংশ্লিষ্ট কাজে অনেক ক্ষেত্রেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পেতে দেরি হতো। অনেক সময় পরের মাসের ১০ তারিখের পরও আগের মাসের বেতন-ভাতা জুটতো। এই পরিস্থিতির উত্তরণে গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওর বেতন-ভাতা দেয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়। পরে গত ১ জানুয়ারি ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতার সরকারি অংশের টাকা পেয়েছেন।দ্বিতীয় ধাপে আরো ৬৭ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ছাড় হয়।