![শ্রেণিকক্ষে প্রমিত বাংলার ব্যবহার শ্রেণিকক্ষে প্রমিত বাংলার ব্যবহার](https://www.amaderbarta.net/media/imgAll/2022December/-প্রমিত-বাংলার-ব্যবহার-2309111515.jpg)
পাঠদানের সময় শ্রেণিকক্ষে প্রমিত বাংলা ব্যবহার করা বিভিন্ন কারণে অপরিহার্য। একজন শিক্ষক এ প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। কারণ, তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য সক্রিয়ভাবে ভাষা প্রয়োগের একটি উদাহরণ স্থাপন করেন এবং একটি পরিবেশ তৈরি করেন যা কার্যকর যোগাযোগ স্থাপনে এবং তাদেরকে দীর্ঘস্থায়ী শিখনে উৎসাহিত করে। একজন শিক্ষক যে বিষয়েরই পাঠদান করে থাকেন না কেনো তাকে শ্রেণিকক্ষে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের একজন রোলমডেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। কেনোনা পাঠদানের মূল পর্বটি ভাষার সার্থক প্রয়োগের মাধ্যমেই ঘটে থাকে।
প্রমিত বাংলা যোগাযোগের একটি স্পষ্ট এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ কাঠামো দেয়। শ্রেণিকক্ষে এটি ব্যবহারের মাধ্যমে পাঠদানকারী শিক্ষক নিশ্চিত করেন যে শিক্ষার্থীরা তার নির্দেশাবলি, ব্যাখ্যা এবং আলোচনা কার্যকরভাবে বুঝতে পারবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গ্রহণযোগ্য ও সার্থক যোগাযোগে ভাষার প্রমিতরূপ একটি কার্যকর ভূমিকা রাখে। বাংলা, বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। শ্রেণিকক্ষে এটি ব্যবহার করা ভাষার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারে সহায়তা করে। পাঠদানকালীন শিক্ষকের কাছ থেকে প্রতিদিন এ ভাষারূপের প্রয়োগ শিক্ষার্থীদের শ্রবণ দক্ষতাকে উন্নত করে এবং তাদেরকে ভাষার মার্জিতরূপ সম্পর্কে সচেতন করে থাকে।
শিক্ষকের ভাষা সচেতনতা ছাত্রদের ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রমিত বাংলা ব্যবহার একটি উচ্চ ভাষাগত মান নির্ধারণ করে, যা শিক্ষার্থীদের তাদের শব্দভাণ্ডার, ব্যাকরণ এবং উচ্চারণ উন্নত করতে উৎসাহিত করে। এভাবে শিক্ষার্থীদের মাঝে কাঙ্ক্ষিত ভাষা দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। বাংলা ভাষার প্রমিতরূপ প্রায়শই আনুষ্ঠানিক এবং পেশাদার সেটিংসে ব্যবহৃত হয়। শিক্ষক যখন শিক্ষার্থীদেরকে শ্রেণিতে প্রমিত বাংলায় কীভাবে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে হয় তা নিজে প্রয়োগ করে সেখান তা তাদের শুধুমাত্র একাডেমিক সেটিংসেই নয় বরং দৈনন্দিন জীবন এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবনেও সফলভাবে ব্যবহার করতে দক্ষ করে তোলে।
শিক্ষক যখন শ্রেণিতে প্রমিত বাংলার ব্যবহার করেন তখন তা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনুকরণীয় উদাহরণ স্থাপন করে। ফলে তাদের ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভাষা প্রয়োগকে একটি আদর্শমান হিসেবে অনুকরণ করে সঠিকভাবে ভাষা ব্যবহার করার সম্ভাবনা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীরা যখন অপ্রমিত বা বাংলার ভুল কাঠামো ব্যবহার করে, তখন তাদের শুধরে নেয়ার বিষয়টি শিক্ষকের ভাষা সচেতনতার ওপর নির্ভর করে। এটি তাদের ভুল শুধরে নিতে তথা আদর্শ ভাষা ব্যবহার শিখতে এবং আত্মস্থ করতে সাহায্য করে।
শিক্ষক বাংলা ভাষায় আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের প্রতি সংবেদনশীল থাকেন এবং একটি উপভাষার ওপর অন্য উপভাষার পক্ষপাতী হওয়া এড়িয়ে চলা থেকে তিনি মুক্ত থাকেন। কিছু প্রেক্ষাপটে প্রমিত বাংলার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে শিক্ষক ভাষার বৈচিত্র্য সংরক্ষণে সচেষ্ট থাকেন, বিশেষ করে প্রাথমিক স্তরে পাঠদানের ক্ষেত্রে। পাঠদানকালে এমন একটি শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রমিত বাংলা ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা না থাকলেও তাদেরকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে এবং প্রমিত বাংলায় প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে উৎসাহ দিতে হবে যাতে তারা জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারেন। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রমিত বাংলায় শ্রেনিকাজে অংশগ্রহণ প্রবণতা বেড়ে যায়।
শিক্ষক হিসেবে, কার্যকর যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক পরিচয় ও ভাষা বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শ্রেণিকক্ষে প্রমিত বাংলা ব্যবহারে যত্নবান থাকা শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবার জন্য প্রত্যাশিত। নতুন কারিকুলামেও এ বিষয়টির ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নিজে ভাষা সচেতন হয়ে, ইতিবাচক উদাহরণ স্থাপন করে এবং একটি পরিবেশ তৈরি করে যা প্রমিত বাংলাকে মূল্য দেয়, শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক শিক্ষা এবং ভাষা বিকাশে একজন শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন।
লেখক: প্রধান শিক্ষক, নরসিংদী