ঢাকা রোববার, ১১ মে ২০২৫ , ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

ইংরেজিতে ফেলের প্রভাব ফলে  

মতামত

মাছুম বিল্লাহ

প্রকাশিত: ০০:০০, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

সর্বশেষ

ইংরেজিতে ফেলের প্রভাব ফলে  

চলতি বছল বেশ কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রকাশিত হলো একজন শিক্ষার্থীর জীবনের উল্লেখযোগ্য পাবলিক পরীক্ষার ফল। যে পরীক্ষা বলে দেয় একজন শিক্ষার্থী এরপরে কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন। করোনা পরবর্তী সময়ে এটিই প্রথম পূর্ণাঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল যেখানে শিক্ষার্থীদের এক বড় অংশকে হোঁচট খেতে দেখা গেছে। এবার ১১টি শিক্ষাবোর্ড থেকে মোট ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ জন শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের মধ্যে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ছাত্র ও ৬ লাখ ৬৮ হাজার ছাত্রী। ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাত প্রায় সমান। এটি একটি চমৎকার দিক নির্দেশ করে যে, নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় মাধ্যমিকের মতোই। তার মানে হচ্ছে, নারী শিক্ষার্থী সেভাবে ঝরে যাননি। বরং পাসের হারে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ছাত্রীরা ছাত্রদের চেয়ে ছয় হাজার ১৩৫ জন বেশি। 
বোর্ডভিত্তিক পাসের হারে বরিশাল বোর্ড সবার ওপরে, এখানে পাসের হার ৮০ দশমিক ৬৫ শতাংশ আর যশোর সবার পেছনে। এ বোর্ডে পাসের হার ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ফল প্রকাশের দিনই যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান জানিয়ে দিয়েছেন, ইংরেজিতে ফেলই ওই বোর্ডে ফল বিপর‌্যয়ের প্রধান কারণ।  

বস্তুত, ইংরেজি বিষয়ে এবার শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্যতা সার্বিক ফলকে নিম্নগামী করে থাকতে পারে। নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে ইংরেজি ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ে পাসের হার ৯০ থেকে ৯৯ শতাংশ। ইংরেজিতে সেটি ৭৭ থেকে ৮৮ শতাংশ। ঢাকা বোর্ডে ইংরেজিতে অকৃতকার্য ১৩ দশমিক ১৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ৮২ শতাংশ, কুমিল্লায় ১৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, যশোরে ২২ দশমিক ৬৪ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, বরিশালে ১৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ, সিলেটে ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ, দিনাজপুরে ১৭ দশমিক ২০ শতাংশ ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ২৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। এই অকৃতকার্যতার হার সার্বিক ফলে প্রভাবে ফেলেছে। দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য প্রায় একই মানের শিক্ষার্থী ভর্তি করতো। গত কয়েক বছর সে বিষয়টি ঘটছে না।

নিজ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দিয়ে সেখানে ভর্তি হওয়ার একটি নির্দেশনা আছে এবং প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু নিজেদের ইচ্ছায় শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারেনি। এই নিয়ম মেনে মিক্সডগ্রুপ অব স্টুডেন্স ভর্তি করতে হয়েছে। ইউনিফর্মলি যারা ভর্তি হন তাদের পড়াশুনা, পরীক্ষার প্রস্তুতি একটু ভিন্ন থাকে যেখানে পিছিয়ে পড়া বা একেবারে সাধারণ শিক্ষার্থী অগ্রগামীদের মতো প্রস্তুতি নিতে পারেন না। মেশানো শিক্ষার্থীদের বোর্ড পরীক্ষায় প্রেরণের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানে কিছুটা প্রভাব হয়তো পড়েছে যার প্রভাব গোটা ফলে প্রতিবিম্বিত হয়েছে। তা ছাড়া, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ড পাসের হারে প্রতিবছর বেশ এগিয়ে থাকে যার যৌক্তিক কোনো ভিত্তি নেই। এ বিষয়টি  নিয়েও প্রচুর লেখালেখি হয়েছে, আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। এসব কারণে তারাও হয়তো অনেক সংযত আচরণ করেছেন পরীক্ষার খাতা দেখায় যার প্রভাব ফলের ওপর পড়েছে। এবার মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ৭৫ যা গত বছর ছিলো ৯২ দশমিক ৫৬ শতাংশ আর কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে এই হার ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ।

২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে  ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।  অনেকে সেটিকে হাইব্রিড জিপিএ-৫ বলেও আখ্যায়িত করেছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকে ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে চালু হওয়া গ্রেডিং পদ্ধতিতে সেটিই সর্বোচ্চ রেকর্ড এবং এই রেকর্ড ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে অটোপাসকেও হার মানিয়েছে। জিপিএ-৫ বৃদ্ধির তিনটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বাসায় বেশি প্রস্তুতি নিতে পেরেছেন। আর এই সিলেবাস তাদের বেশ আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিলো। যদিও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুসরণ করে একটি টপিকের ধারণা পাওয়া কষ্টকর। এটি এক ধরনের অসম্পূর্ণ লেখাপড়া। তারপরেও এটি করতে হয়েছে অবস্থা বিবেচনায়। জেএসসি ও এসএসসির ফল হিসেবে আবশ্যিক বিষয়ের নম্বর দেয়া আর একটি কারণ। অন্যটি হচ্ছে ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা না নিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে মূল্যায়ন। 

বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ৮৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ পাস করেছেন। মানবিক বিভাগে ৭০ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭৭ শতাংশ পাস করেছেন। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পাসের হারও সার্বিক পাসের হারকে প্রভাবিত করেছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও  ৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করেননি। গতবছর এই সংখ্যা ছিলো ৫০, এবার ৪২, এটি অবশ্য কোনো উন্নয়নের চিহ্ন বহন করে না। কর্তৃপক্ষের বিশেষ কোনো পদক্ষেপের কথা বলে না। এবার ঢাকা বোর্ডের অধীনে পাঁচটি, রাজশাহীর চারটি, কুমিল্লায় একটি, যশোরে সাতটি, চট্টগ্রামে তিনটি, দিনাজপুরে ষোলটি, ময়মনসিংহে চারটি প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেননি। এ থেকে উত্তরণে দেখা যায় এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান হলে শিক্ষকদের এমপিও বন্ধ বা স্থগিত করার মতো শাস্তি। সহায়তামূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখি না। কোন বোর্ড একেবারে পিছিয়ে পড়া এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কী ধরনের সহায়তা করে কতোটা ওপরে নিয়ে যেতে পারে আমরা সেটি দেখতে চাই। 

লেখক: লিড-এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ টিম দৈনিক শিক্ষাডটকম 

জনপ্রিয়