ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ , ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

বই উৎসব : যাত্রা শুভ হোক

মতামত

গুরুদাস ঢালী

প্রকাশিত: ০০:০০, ১ জানুয়ারি ২০২৪

সর্বশেষ

বই উৎসব : যাত্রা শুভ হোক

‘আলো আমার, আলো ওগো, আলো ভুবন ভরা, আলো নয়ন ধোয়া আমার, আলো হৃদয় হরা’। বই দেখাবে সুন্দর আগামীর স্বপ্ন, উদ্ভাসিত আলো। সেই আলোয় জীবন, ভুবন হবে আলোকিত। বই হলো, জ্ঞান অর্জনের প্রথম মাধ্যম, শুদ্ধ আত্মশুদ্ধির প্রগতিশীল মনন, শীল্পের বিশেষ মাধ্যম। বই উৎসব হচ্ছে ‘আলোর উৎসব’। নতুন বছরের শুরুতে দেশের কোটি কোটি শিশু নতুন সূর্য দেখছে আর হাতে নিযে ছুটছে স্বপ্নের নতুন শ্রেণির, নতুন আবাহ নতুন বই। কোমলমতি শিশুরা অন্তহীন আনন্দের মধ্য দিয়ে জ্ঞান অর্জনের এমন এ উৎসব আগামী দিনের স্বপ্ন দেখতে প্রস্তুত হচ্ছে। সুনগারিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিশুদের বইপ্রীতির কোনো বিকল্প নেই। তাই তাদের হাতে বই তুলে দেয়া প্রয়োজন। আসলেই বইয়ের মাধ্যমে নানা ভাবনার সংমিশ্রণে নিজের ধারণা ও বিশ্বাস দৃঢ় হয়। 

আজকের শিশু আগামী দিনের সু-নাগরিক, নিজস্ব সু-চিন্তিত মতবাদের ওপর আস্থাবান, তারাই গণতন্ত্রের সম্পদ। আর ভবিষ্যত সু-নাগরিক পেতে হলেই দেশের শিশু থেকে শুরু করে সকল শ্রেণি, পেশার মানুষের হাতে বই তুলে দেয়ার বিকল্প নেই। সারা বিশ্বের মনীষীদের বইয়ের নেশার প্রতি দৃষ্টি দিয়ে মানবজীবনকে এক দৃষ্টান্তমূলক উক্তি দিয়েছিলেন মহামতি টলস্টয়। সেটি ঠিক এমন, ‘জীবনে মাত্র তিনটি জিনিসের প্রয়োজন বই, বই, এবং বই’। জ্ঞান অর্জনের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে বই। তাই মানবজীবন যাত্রাকে সফলতার আলোকে আলোকিত করবার প্রধান উপায় হচ্ছে বই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের হাত ধরে এগিয়ে চলছে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের শত শত গাড়ি ভর্তি স্বপ্ন, ভালো মানুষ হওয়ার স্বপ্ন। সুতরাং ভালো বই পড়েই জ্ঞান অর্জন করে যথাযথ প্রয়োগ ঘটিয়েই সমাজ বা রাষ্ট্রের অনেক পরিবর্তনের চিন্তা করা আবশ্যক।

টানা ১৩ বছর ধরে মাধ্যমিকসহ বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়-শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এটি সরকারের অন্যতম ভালো কাজ নিঃসন্দেহে। কোনো কোনো বছর বই প্রকাশে সামান্য বিলম্ব হয়েছে বটে, তবে উদ্যোগটি যে মহৎ এতে কোনো সন্দেহ নেই।

প্রাথমিকের পাশাপাশি ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সরকার মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মাঝেও বিনামূল্যে বই বিতরণ করে আসছে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১ জানুয়ারি বই উৎসব শুরু।

বই উৎসবে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রাক প্রাথমিকের ৩০ লাখ ৮০ হাজার ২০৫ জন, প্রাথমিক স্তরের এক কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার ২৮৪ জন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৮৫ হাজার ৭২২ জন। ইবতেদায়ির প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৮ জন, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির এক কোটি চার লাখ ৯০ হাজার ১০৭ জন, দাখিলের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৮ জন, ইংরেজি ভারসন ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির এক লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ জন, কারিগড়ির ট্রেড বই ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির দুই লাখ ৭১ হাজার ৯৫২ জন, দাখিল ভোকেশনালের ছয় হাজার ১৫ জন ও ব্রেইল পদ্ধতির ৭২৪ জন; এই মোট তিন কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ জন শিক্ষার্থী পাবে বিনামূল্যে নতুন বই।

বইয়ের সঙ্গে কতো কিছুই জড়িত। এখন বই বলতে শুধু কাগজে প্রিন্ট করা বই বোঝায় না। এখন আছে ডিজিটাল বুক, ইলেকট্র্রনিক বুক বা ই-বুক। আছে অন্ধদের জন্য ব্রেইলি বুক। পড়তে বিরক্ত লাগে যাদের কিংবা সময় নেই পড়ার, তাদের জন্য আছে অডিও বা স্পোকেন বুক। টেক্সট লিখেই বুক হয় না শুধু, আছে ছবি এঁকে এঁকে গল্প বলা। বলে গ্রাফিক্স বুক।

সাহিত্যের ইতিহাসের যথার্থ দিন-তারিখ খুঁজে বের করা বড়ই দুষ্কর। যখন লিপি আবিষ্কার হয়নি, অর্থাৎ লিখিত হওয়ার অনেক আগে থেকেই সাহিত্যের সৃষ্টি। সোজা বাংলায় বলা যেতে পারে, প্রাগৈতিহাসিক যুগেই সাহিত্য এসে গেছে। এটা ভাবা খুব অসঙ্গত নয় যে, মানুষের কথা বলা ও কল্পনার ক্ষমতার সঙ্গে সাহিত্য জড়িত। মৌখিক সাহিত্যের ইতিহাস সুপ্রাচীন। গান, অভিনয়, আবৃত্তি ইত্যাদি নানা ভঙ্গিতেই মুখে মুখে সাহিত্য ছড়িয়েছে। অন্ধ কবি হোমারের মহাকাব্য মুখে মুখে গাওয়া হতো। রামায়ণ-মহাভারতও তাই। তারও আগে, মায়ের মুখের ঘুমপাড়ানি গান থেকে শুরু করে দাদা-দাদীর গল্প বলার ঐতিহ্যের মধ্যেও লুকিয়ে আছে সাহিত্যের আবাহনের ইতিহাস।

‘নতুন বছর নতুন দিন, নতুন বই-য়ে হোক রঙ্গিন,’ ‘নতুন বইয়ের ঘ্রাণ শুঁকে ফুলের মতো ফুটবো, বর্ণমালার গরব নিয়ে আলোয় মেতে উঠব। এ উৎসব ইতোমধ্যেই সবার প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

নতুন বইয়ের গন্ধ ফুলের গন্ধকেও হার মানায় সম্ভবত শিশু শিক্ষার্থীদের কাছে। তাদের জীবনের শিক্ষার ক্ষেত্রে সে গন্ধকে অটুট রাখাই হবে আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। সেক্ষেত্রে আমরা কতোটুকু সফল, তার ধারাবাহিকতার হিসাব রাখা, এবং তাতে সফলতার পালক পরিয়ে দেয়াই হবে আমাদের রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতির অঙ্গীকার। একটি দেশের সব পরিবারের শিশুদের শিক্ষামুখী করার, তাকে আন্দেলিত করা সরকারের নানা প্রচেষ্টার একটি অংশ। সহজেই হাতের কাছে নতুন ক্লাসের নতুন বই এসে গেল এবং তা যদি হয় বিনামূল্যে, কেবল অসচ্ছল অভিভাবক-শিক্ষার্থীরাই বা কেনো, শিক্ষার প্রতি উদাসীন অভিভাবক-শিক্ষর্থীদেরও তাতে আন্দোলিত উৎসাহিত হওয়ার কথা। হচ্ছে ও তাই। সাধারণ ঘরের শিক্ষার্থীরা আগ্রহি হয়ে উঠছে। গ্রাম ও বস্তির তথা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের কথা এ প্রসঙ্গে আগে মনে আসে। তাদের ঝড়ে পড়ার সংখ্যা এর মধ্যদিয়ে অনেক কমে গেছে। শিক্ষার্থীদের কাছে প্রধান শিক্ষা উপকরণ হলো পাঠ্যবই।  তা যেকোনো শ্রেণিরই হোক।

মাধ্যমিকে বিনামূল্যে বই বিতরণ যখন ছিলো না, নতুন বই বাজারে আসতে বছরের অনেক সময় চলে যেতো। শ্রেণি উত্তীর্ণ সহপাঠী, আত্মীয়-স্বজন কিংবা ভাই বোনের কাছ থেকে পুরনো বই এনে বা কিনে পড়তে হতো, অনেকের শেষ পর্যন্ত তাতেই খুশি থাকতে হতো। কারণ, কেনার সামর্থ্য ছিলো না। এসব দৈন্যতা, সীমাবদ্ধতা মুছে গেছে। শিক্ষার্থীদের কাছে এখন বছরের শুরুতেই  উপহার হয়ে আসে নতুন বই।

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, সব ক্ষেত্রে দেখা যায় উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে একটা বিদ্যালয়ে সাড়ম্বরে এই উৎসবটি পালন করা হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল গুলোতে সেভাবে পালন করা হয় না। ১ জানুয়ারি আমদের প্রাণের মেলা হিসেবে মেনে নিতে হবে। নতুন পুরাতন শিশুর মিলন মেলায় পরিণত করতে হবে। শত শত শিশুর পদচারণায় মুখরিত হবে বিদ্যালয় অঙ্গন। লক্ষ লক্ষ নতুন শিশুর শিক্ষাজীবনকে রঙিন করে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করতে হবে।

আজ ১ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ। সব শিক্ষার্থীর প্রতি রইল শুভকামনা, শুভ হোক নতুন পথ চলা। এই দিন যেনো হয় চিরদিন। 

লেখক: শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার টেকনিক্যাল অফিসার

জনপ্রিয়