ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫ , ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

ইসলামে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা

মতামত

মুফতী মুহাম্মাদ আবিদুর রহমান, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ১৩:৪০, ১ মে ২০২৫

সর্বশেষ

ইসলামে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা

মানব জীবনের এক অপরিহার্য বিষয় ছিল শ্রম। যারা কায়িক শ্রম দেয় সাধারণত তারাই শ্রমিক হিসেবে চিহ্নিত হয়। ইসলামে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা সম্পর্কে বাস্তবধর্মী ও কালোত্তীর্ণ বিধান দিয়েছে। শ্রমের প্রতি মানুষকে উৎসাহ প্রদান করে ঘোষণা করে কোরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন: অতঃপর নামাজ শেষ হয়ে গেলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং (বৈষয়িক কাজ-কর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্যর মাধ্যমে) আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর। (সুরা জুমুআহ ১০) শ্রমের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: নিজ হাজে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায় না। আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। (বুখারি শরিফ: ২০৭২) শ্রম ও শ্রমিকের এমন মর্যাদার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন: যেই সত্তার হাতে আবু হুরায়রার প্রাণ তার কসম! যদি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, হজ্জ ও আমার মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহারের ব্যাপারগুলো না থাকত তাহলে আমি শ্রমিক হিসাবে মৃত্যুবরণ করা পছন্দ করতাম(মুসলিম শরিফ: ১৬৬৫)

শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ধর্ম ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকারের কথা বিধৃত হয়েছে। শ্রমিকরা সমাজের সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত, অবহেলিত নিগৃহীত। ইসলাম তাদেরকে প্রথমে দিয়েছে মানুষের মর্যাদা, তারপর দিয়েছে তার প্রতি সুবিচারের নির্দেশ

ইসলামে মালিক শ্রমিকের সম্পর্ককে তুলনা করেছে পিতা ও সন্তানের ন্যায়। ইসলাম শিখিয়েছে নিজের পরম আত্মীয়ের মতোই শ্রমিকের সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ করতে। পরিবারের সদস্যদের মতই তাদের খাদ্য ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করতে। শ্রমিকের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার প্রতিটি মুহূর্তের প্রতি মালিকের খেয়াল রাখা এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করাকে মালিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে চিহ্নিত করেছেশ্রমিকদের সম্পর্কে সচেতন করে মালিক পক্ষকে ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে: তোমাদের সেবকেরা তোমাদের ভাই। তাদেরকে আল্লাহ তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং তোমাদের কারও অধীনে কোনো ভাই থাকলে সে যা খায় তাকেও যেন তা খাওয়ায়, সে যা পরিধান করে তাকেও যেন তা পরতে দেয় সাবধান! তোমরা তাদের ওপর কষ্টকর কাজ চাপিয়ে দিয়ো না। যদি দিতেই হয়, তাহলে তাদেরকে সহযোগিতা কর। (বুখারি শরিফ: ৩০)

হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অধীনস্থদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। সাহাবিগণ বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাদের অবহিত করেননি যে, এই উম্মতের অধিকাংশ হবে গোলাম ও এতিম। নবীজি বললেন, হ্যাঁ। অতএব তোমরা তোমাদের সন্তানদের মতো তাদের সঙ্গে ব্যবহার করো এবং তোমরা যা আহার কর তা তাদেরকে আহার করাও। (ইবনে মাজাহ: ৩৬৯১)

নবীজি (সা.) বলেন কিয়ামতের ভয়াবহ দিনে কিছু মানুষের প্রতিপক্ষ হবেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আল্লাহ যাদের প্রতিপক্ষ হবেন তাদের একটি শ্রেণি সম্পর্কে নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, যে কোনো মজুর নিয়োগ করল, তারপর তার থেকে পুরো কাজ বুঝে নিল, কিন্তু তার পারিশ্রমিক পরিশোধ করল না। (বুখারি শরিফ: ২২২৭)

শ্রমিকের অধিকার বিষয়ে উম্মতকে সচেতন করে নবীজি (সা.) যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিকের পারিশ্রমিক পরিশোধ করে দিতে বলেছেন। সেই দ্রুততা কেমন কতটুকু হবে এরও একটা পরিধি উল্লেখ করে নবীজি বলেন: শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক মিটিয়ে দাও। (ইবনে মাজাহ: ২৪৪৩)

ইসলাম কেবল শ্রমিকের অধিকার দেয়নি, শ্রমিকের দায়িত্ব সম্পর্কেও সচেতন করে দিয়েছে। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন: ভৃত্য যখন তার মনিবের কল্যাণ কামনা করবে এবং আল্লাহর ইবাদত সুন্দর করে করবে, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ প্রতিদান। (আবু দাউদ শরিফ: ৫১৬৯)

লেখক: মুহাদ্দিস, মাদরাসাতুল মুমিনাত, পল্লবী, ঢাকা

 

জনপ্রিয়