
মালির সামরিক শাসক কর্নেল আসসিমি গোইতা। ছবি : সংগৃহীত
মালির সামরিক শাসক কর্নেল আসসিমি গোইতা ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহাল থাকছেন। তাও কোনো নির্বাচন ছাড়াই। ক্ষমতায় আসার সময় যে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেটি আর বাস্তবায়ন না করেই নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করলেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
২০২১ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয়বারের মতো অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন গোইতা। সে সময় তিনি ঘোষণা দেন, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দেই দেশে সাধারণ নির্বাচন হবে। তবে সেই ঘোষণা আলোর মুখ দেখেনি। বরং 'জাতীয় সম্মেলন' আয়োজন করে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সুপারিশে আরও ছয় বছরের মেয়াদ নিজের পক্ষে টেনে নিলেন গোইতা।
তবে এই সম্মেলন বয়কট করে মালির প্রধান বিরোধীদল। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সম্মেলন ছিল গোইতার ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনার অংশ। এখনও পর্যন্ত তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর এই সুপারিশের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
গোইতার এই পদক্ষেপে মালির গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, দীর্ঘসময় ধরে ভোটহীন শাসন পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটিতে বহুদলীয় রাজনীতির পথরুদ্ধ করে দিতে পারে।
মালির বিরোধীদলীয় নেতা মোহামেদ সালিয়া তৌরে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বহুদলীয় রাজনীতিকে দমানোর চেষ্টা করাটা হবে ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্ত।
সম্মেলনের সুপারিশকে ‘মালির সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করার প্রস্তাব’ আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটির সাহেল অঞ্চলের গবেষক উসমান দিয়ালো বলেন, এই প্রস্তাবে আমি আতঙ্কিত। এটি মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।
অবশ্য, সম্মেলনের সুপারিশ নিয়ে কিছু ধোঁয়াশা এখনও রয়ে গেছে। সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করা হবে নাকি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণে ব্যর্থ দলগুলোকে বাতিল ঘোষণা করা হবে, সম্মেলনের বিবৃতি থেকে সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়নি।
এএফপির হাতে আসা এক নথি অনুযায়ী, দেশে শান্তি স্থাপন হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্বাচন সংক্রান্ত যে কোনও কার্যক্রম স্থগিত রাখার সুপারিশ করেছে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা।
মালির ক্ষমতাসীন সেনা সরকার বর্তমানে ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদার সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর সহিংসতা দমনে ব্যস্ত। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রতিবেশী দেশ বুরকিনা ফাসো ও নাইজারের সেনাশাসকদের সঙ্গে জোট গড়ে তুলেছেন গোইতা। এই তিন দেশ এখন ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকেছে।