ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

যুগান্তকারী পরিবর্তন শিক্ষাক্ষেত্রে

মতামত

আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া

প্রকাশিত: ০০:০০, ৩০ মে ২০২৩

সর্বশেষ

যুগান্তকারী পরিবর্তন শিক্ষাক্ষেত্রে

শিক্ষা মানুষকে উন্নত করে। শিক্ষার মাধ্যমেই মানবীয় গুণাবলি অর্জিত হয়। আর মানুষের অর্জিত গুণের সমন্বয়েই হয়ে থাকে সামাজিকীকরণ। যা সমাজ বিকাশের ভিত্তি এবং যা কাঙ্খিত আচরণ করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। মানুষ খাপ খাইয়ে চলতে শেখে পরিবর্তনশীল পৃথিবীর পরিবর্তিত সব অবস্থার সঙ্গে। তৈরি হয় কাঙ্খিত সামাজিক মূল্যবোধ। 
ব্যক্তি ও সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা, মমত্ত্ববোধ, শ্রদ্ধা-ভালবাসা, সততা, সৌহার্দ এবং দেশপ্রেম অর্জিত হয় শিক্ষার মাধ্যমে। তাই আদিম যুগ হতে আজ পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত আছে সমাজের প্রয়োজনে। এ সমাজের আলোকিত মহৎপ্রাণ মানুষরা শিক্ষাদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। 
মহান আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম মানুষকে যে বাণীটি দিয়েছেন তা হলো ‘পড়’- এ পড়ার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের পড়তে হবে, জানতে হবে, বুঝতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আজকের শিক্ষার্থীরাই সমাজ বদলের কারিগর। তাদের মেধা ও মননকে সৃজনশীল কাজে লাগাতে হবে। দেশপ্রেমিক উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার প্রেরণা যোগাতে হবে। 
মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, দুর্নীতি ও বাল্য বিয়েকে না বলে এ সব থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে থাকার শপথ নিতে হবে। তাদের ভাবনার জগতকে বিস্তৃত করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নিজের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তারা পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন। সততা, নিষ্ঠা, ও কাঙ্খিত মূল্যবোধ সম্পন্ন একজন মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে হবে। কেবল পরীক্ষায় ভাল ফলাফল নয়। মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করতে হবে। সমস্যা সমাধানই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ। অবশ্যই মূল পাঠ্যবই পড়তে হবে। প্রত্যেকটি শব্দ, প্রত্যেকটি বাক্য বুঝতে হবে। তারপর লেখাটির মর্মার্থ খুঁজে নিতে হবে। সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। পাঠ্য বইয়ের বাইরের বই পড়তে হবে, নির্দিষ্ট কারিকুলামের বাইরে যেটা শেখা হয়নি, পড়া হয়নি তা পড়তে হবে। তাহলে শিক্ষার প্রকৃত মজা পাওয়া যাবে। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু থাকা ষ্টুডেন্ট ক্যাবিনেট, স্কাউট, গার্ল গাইড, মাদক বিরোধী কমিটি, খেলাধুলা, বিতর্ক ইত্যাদি বিষয়ের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে নেতৃত্ব প্রদানের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। 
একমাত্র শিক্ষাই আমাদের উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। ছেলে মেয়েদের সুশিক্ষা দিয়ে মানুষের মত মানুষ করে তুলতে অভিভাবকদের ভূমিকা অপরিসীম। কেবল স্কুলের শিক্ষকদের ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না। শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার ৬ ঘণ্টা থাকেন স্কুলে আর ১৮ ঘণ্টা  অভিভাবকদের দায়িত্বে থাকেন। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের যত্নশীল হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বর্তমানে মায়েদের এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত সচেতন ও যত্নশীল হতে হবে। সময়মত ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে হবে, তারপর সেখানে খোঁজ নিতে হবে- গেলো কিনা। প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। সপ্তাহে একবার অভিভাবককে স্কুলে যেতে হবে- এ কাজটি কোনো অভিভাবক সঠিক ভাবে করলে তার সন্তান দিন দিন উন্নতি করবে, সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে। 

বর্তমান সদাশয় সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়ে সেটা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। বছরের ১ তারিখে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে নতুন পাঠ্যপুস্তক দেয়া হচ্ছে। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। অতীতে কখনো গ্রামীণ জনপদে ৪তলা একাডেমিক ভবন তৈরি হতে দেখা যায়নি। বর্তমানে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধুনিক সুযোগ সুবিধা ও শিক্ষা উপকরণসহ সুরম্য ৪তলা ভবন নির্মিত হয়েছে। শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিকে সহজীকরণ করে ঘরে বসে অনলাইনে অতি সহজেই এমপিও সুবিধা পাবার সুযোগ হয়েছে। কারিকুলামের ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। 
জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ যা বিশ্বমানের মানব সম্পদ তৈরির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে চালু করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শ্রেণিতে এ কারিকুলাম চালু করার ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে নারী শিক্ষার প্রসার হয়েছে। আইসিটিকে ৬ষ্ঠ হতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আবশ্যিক করা হয়েছে। আইসিটি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সব শিক্ষককে বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের Interactive Teaching and Live class Management - শীর্ষক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি লার্নিং সেণ্টার স্থাপন করা হয়েছে। ৩২৬৬৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। যাতে অনেক কঠিন বিষয় প্রজেক্টরের মাধ্যমে সহজ করে এবং আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকৃষ্ট করে শিক্ষা দেওয়া যায়। ৪৮ হাজার মাল্টিমিডিয়া ও স্মার্ট ক্লাসরুম স্থাপন প্রক্রিয়াধীন আছে। সারাদেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্পের মাধ্যমে বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। যা আমাদের স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। 
মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করে একই কারিকুলামের আওতায় আনা হয়েছে। অর্থাৎ সাধারণ শিক্ষা ও মাদরাসার শিক্ষার উভয় ক্ষেত্রে শিখনের ১০টি ক্ষেত্র নির্বাচন করা হয়েছে। উভয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২২ জন শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। সৃষ্ট পদে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের অবসর সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে অবসর সুবিধা বোর্ড এবং কল্যাণ ট্রাষ্ট গঠন করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ছাত্রীদের পৃথক পৃথক ওয়াশ ব্লক তৈরি করা হচ্ছে। উপকূলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাইক্লোন সেণ্টার নির্মিত হচ্ছে। Rain water Harvesting system করে পানীয় জলের সুব্যবস্থা করা হচ্ছে। 
শিক্ষার্থীদের সুযোগ অবারিত। শিক্ষকদের আন্তরিক হতে হবে। শিক্ষার্থীর সাথে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে হবে। এদেশের মানুষকে এগিয়ে নিতে পারলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। প্রয়োজন সততা এবং নিষ্ঠার। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। আমাদের অর্জন অনেক। অর্জিত সম্পদ ও প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে সঠিক ভাবে নেতৃত্ব দিতে উন্নত নৈতিকতা সম্পন্ন বিজ্ঞান মনস্ক ও তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ তৈরি করতেই শিক্ষায় এ আয়োজন। 
শুধু পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করা মেধাবী শিক্ষার্থী হলেই চলবে না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দেশ প্রেমিক হতে হবে। তথ্যসন্ত্রাস, অপসংস্কৃতি যেনো আমাদের মেধাবীদের নষ্ট করতে না পারে তার জন্যে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। কোচিং বাণিজ্য পরিহার করে আদর্শ শিক্ষক হতে হবে। মেধা মননে, জ্ঞানে গরিমায় পরিস্ফুটিত করে সমৃদ্ধ মানুষ হিসেবে আমাদের শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে শিক্ষকদের আন্তরিক হতে হবে। 
৪র্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় দেশ জুড়ে ফিনল্যান্ডের স্কুল ও কলেজের আদলে ৩০০টি ‘স্কুল অব ফিউচার’ মডেল এডুকেশনাল ইনষ্টিটিউট গঠন করে এই ইনষ্টিটিউশনের মাধ্যমে ফিনল্যান্ড যেভাবে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন, সমস্যা সমাধানমুখী প্রযুক্তি নির্ভর প্রকল্প নিয়ে কাজ করে সেভাবেই বাংলাদেশে ১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ৪ কোটি ছাত্র-ছাত্রী ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দে উন্নত বাংলাদেশের ভিশন বাস্তবায়নে এ ইনষ্টিটিউট হতে লব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব দিতে পারবে। তৈরি হবে উন্নত সোনার বাংলাকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সত্যিকারের সোনার মানুষ, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। 

লেখক : উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, লোহাগড়া, নড়াইল

জনপ্রিয়