
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদের দায়িত্বকে আমানত হিসেবে দেখেন অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। সম্প্রতি দৈনিক আমাদের বার্তাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি যে প্রশাসন খুব বেশি উপভোগ করি তা না। গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী বাস্তবতায় মূলত শিক্ষার্থীদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে এই দায়িত্বটা নিয়েছিলাম। আমার কিছু প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাও আছে। খুব বিনীতভাবে বলছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও বেশ কিছু বড় বড় কাজ করেছি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠানে। এর আগেও আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ছিলাম। আমি মূলত আমার পড়াশোনার জগতে থাকতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করি। সে হিসাবে আমি এটাকে আমানত হিসেবে নিয়েছি এবং আমার সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রতিদিন করছি।
নিজের শিক্ষকতা পেশায় আসার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমার বাবা মূলত পাকিস্তান পিরিয়ডে সিভিল সার্ভিসে ছিলেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে। একটা পর্যায়ে উনি জাতিসংঘের পরামর্শক ছিলেন। আমার পিতা ও পিতামহসহ পূর্বসুরিরা সিভিল সার্ভিসমুখি ছিলেন এটা ঠিক। তবে আমি মূলত শিক্ষকতাকে বাই চয়েজ হিসেবে নিয়েছি। বুঝেশুনেই এ পেশায় এসেছি। এতে আমার বাবারও কিছু আগ্রহ ছিলো। আর আমি মনে করেছি যে, তত্ত্বের জগতের সঙ্গে বাস্তব জগতের একটা সম্পর্ক তৈরি করা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ ছাড়াও সিভিল সার্ভিসের সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক আছে, আর এনজিও সেক্টরের সঙ্গেও সুসম্পর্ক আছে। আমরা তো অনেক বিভাজন করে ফেলেছি সমাজটাকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের জন্য একসাথে থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। সিভিল সার্ভিসের সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে সভ্যতার সূতিকাগার। আর এনজিওগুলো সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষিত পার্টনার হতে পারে। অতএব, এই প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলোর একটা ঐক্যের মাধ্যমে দেশ গঠনে ভূমিকা থাকা উচিত বলে মনে করি। মাঝে মাঝে আমি আমার প্র্যাকটিসিং জগতে কাজ করেছি এই সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য।
গত ৫ আগস্টের পরিবর্তিত রাষ্ট্রীয় প্রেক্ষাপটে দায়িত্ব গ্রহণের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কঠিন রকম পরিস্থিতি আমরা মোকাবেলা করেছি। এখনো করছি। তবে স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছি। প্রথমদিকে খুবই কঠিন এবং অরাজক পরিস্থিতি ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ ছিলো। হলগুলো একদম ভাসমান অবস্থায় ছিলো। যৌক্তিক- অযৌক্তিক প্রতিদিনের দাবি-দাওয়া ছিলো। এবং কিছু অসাধ্য দায়িত্ব আমরা নিয়েছিলাম রাজনৈতিক কারণে। যেগুলো পালন করার মত সক্ষমতা আমাদের নেই। যেমন সাত কলেজ। তারাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, দেশের গুরুত্বপূর্ণ কলেজ। তো, প্রতিষ্ঠানগুলো সব মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছে- এরকম একটা অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে আমরা দায়িত্ব নিয়েছিলাম। সবার সহযোগিতায় এখন মোটামুটি একটা পর্যায়ে এসেছে।
আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম চালু করা। দায়িত্ব নেয়ার পঞ্চম সপ্তাহের মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করতে পেরেছিলাম। মূলত সকলের সহযোগিতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা একদম সিস্টেমেটিক কনসাল্টেশন করেছি। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই কাজটি চালু করা গেছে। শিক্ষকদেরও যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি। অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ ছিলো, ছাত্র শিক্ষক দ্বন্দ্বের কারণে। বিশেষ করে আমাদের এই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে।কিছু শিক্ষকের কারণে যে তীব্র ক্ষোভ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছিল সেটিকে মোকাবেলা করার জন্য আমরা পাঁচ স্তর বিশিষ্ট একটা কাউন্সেলিং প্রসেস চালু করেছিলাম। এটার বেশ কিছু ভালো ফল পেয়েছি। ১৭টা বিভাগ সম্পূর্ণ অকার্যকর ছিলো। সবই মোটামুটি সমাধান হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে সাত কলেজকে পৃথক করার চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, যখন দেখলাম যে আমাদের শিক্ষার্থীরাও এটা চাচ্ছেন না। কলেজের শিক্ষার্থীরাও চাচ্ছেন না। সংঘর্ষ রক্তক্ষয়ী পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। ৪/৫ ঘণ্টা ধরে তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিলো। তখন দ্রুতই সিদ্ধান্তটা নিতে হয়েছিলো। এ ব্যাপাওর সাংবাদিকদেরও বিরাট ভূমিকা ছিলো। অনেক সহযোগিতা করেছেন তারা। এই পরিস্থিতিতে আমাকে খুব দ্রুতই সিদ্ধান্তটি নিতে হয়েছে। সাত কলেজের সব অধ্যক্ষ ও আমাদের প্রশাসনের প্রধান- মিলে সবাই একসঙ্গে বসেছিলাম। সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিম, শিক্ষকদের কিছু অংশের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছিলাম। তার আগেই আমরা লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলাম যে, আগামী বছর থেকে এই দায়িত্ব আর নিতে পারবো না। সম্ভব না এই পরিস্থিতিতে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো। কিছু নিয়ে আমার কোনো অসন্তোষ নেই। মন্ত্রণালয় থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি। তা না হলে তো এ ধরনের কাজ করা কঠিন হতো। তখন আমরা যেটা বিবেচনা করেছি, সেটি হলো পরিস্থিতি রক্তক্ষয়ী পর্যায়ে গড়াতে পারে। আর আমরা যদি সেভাবে গড়াতে দেই, বিভিন্নমুখী ষড়যন্ত্র আছে। সারা দেশেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ হতে পারে। শুধু ঢাবির ক্ষেত্রেই নয়, আমি মনে করেছি এবং আমার সাথে যারা কাজ করেন তারা মনে করেছেন যে, বৃহত্তর ও জাতির স্বার্থেই এই সিদ্ধান্তটা আমাদের নেওয়া দরকার ছিলো। (চলবে)
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।