ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৪ আশ্বিন ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকের বর্তমান অবস্থা

মতামত

লিজা আক্তার

প্রকাশিত: ২২:২০, ৪ অক্টোবর ২০২৩

সর্বশেষ

শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকের বর্তমান অবস্থা

শিক্ষক কথাটির মানে কী? শিক্ষক কে হবেন? তাঁর দায়িত্ব কর্তব্য কী? এ প্রশ্নগুলো যেমন আমাদের মনে আনাগোনা করে, ঠিক একই প্রশ্নগুলো কিন্তু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের ক্ষেত্রেও করা চলে। শিক্ষার্থী কথাটির মানে কী? কে শিক্ষার্থী হবে? তার দায়িত্ব কর্তব্য কী? অভিভাবক কথাটির মানে কী? তার দায়িত্ব কর্তব্য কী? ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক প্রশ্ন!

শিক্ষকের প্রধান কাজ শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদান করার মাধ্যমে সেই শিক্ষাকে শিক্ষার্থীর জীবনে প্রয়োগ করার যোগ্যতা অর্জনে সক্ষম করে তোলা। এখন কথা হচ্ছে এমন শিক্ষক আমাদের সমাজে সত্যিকার অর্থে কতোজন আছেন? আবার অন্যদিকে যদি বলি, শিক্ষার্থীর কাজ হলো শিক্ষকের প্রদেয় শিক্ষাকে জীবনে কাজে লাগানোর জন্য নিজেকে তৈরি করা। তবে হ্যাঁ, সে শিক্ষা অবশ্যই হবে ইতিবাচক ও জীবনঘনিষ্ঠ। 

একটা সময় ছিলো যখন অভিভাবক শিক্ষার্থীকে শিক্ষকের কাছে দিয়ে গিয়ে বলতেন, স্যার আপনি আমার সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ বানিয়ে দেন। সে সময়টা খুব ভালো ছিল; শিক্ষকরাও যেন মানুষ বানানোর কাজটাকেই তাদের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করতেন। তারপর সময়ের পালাবদলে আমরা লক্ষ্য করলাম আরেক শ্রেণির অভিভাবককে, যারা তাদের সন্তানকে শিক্ষকের কাছে দিয়ে গিয়ে বলেন, স্যার যেভাবেই হোক A+ পাওয়া চাই। সন্তানকে সুশিক্ষা দেয়া বা ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করার পরিবর্তে সন্তানকে A+ পাইয়ে দেয়াটাই শিক্ষকের কাজ বা ব্রত হয়ে গেলো। 

তাছাড়া আরো এক শ্রেণির অভিভাবকের উদ্ভব ঘটলো, তারা বলতে শুরু করলেন সন্তানকে শাসন করা যাবে না। সন্তান ভুল করলেও শাসন করা যাবে না, যদি করেছো তো সেই শিক্ষককেই সন্তানের সামনে তেড়ে এসে মারধর পর্যন্ত করতে চায়। তাহলে বলুন তো আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকের কোনো সম্পর্কে দাঁড়িয়ে আছি!

হ্যাঁ, এ কথা সত্য গুটিকয়েক কাণ্ডজ্ঞানহীন শিক্ষক আছেন যাদের কৃতকর্মের জন্য অন্য শিক্ষকদের হেনস্ত হতে হয়। সব শিক্ষকই কিন্তু শিক্ষার্থীদের মঙ্গল চান, শিক্ষার্থীদের তাদের সন্তানের মতোই দেখেন। আর যতোটুকু শাসন করেন শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্যই করেন। 

বর্তমানে এক শ্রেণির শিক্ষার্থীরও আবির্ভাব হয়েছে, যারা সরাসরি শিক্ষকদের হুমকি দেয় যে, তাদের শাসন করা যাবে না, তাহলে মামলা হয়ে যাবে। এই যে শিক্ষার্থীরা এতো ঔদ্ধত্য আচরণ করছে এ জন্য আসলে দায়ি কে? প্রয়োজনে শাসন ও আদর দু’টোরই দরকার আছে। সন্তান যখন বাড়িতে দুষ্টুমি করে তখন নিশ্চয় বাবা-মা তার সন্তানকে শুধু আদরই করেন না, শাসনও করেন। কিন্তু শিক্ষক শাসন করলেই দোষ। তাই এখনকার অনেক শিক্ষক মনে করেন নিজের খেয়ে পরের সন্তান মানুষ করার কী দায় পড়েছে? তবে যারা এ কথা মানতে পারেন না, বিবেকের কাছে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা মেনে নিতে পারেন না, সেই সকল দায়িত্ববান শিক্ষকই এখন বেশি অপমানিত হন। 

এবার আসি নতুন কারিকুলাম আসার পরের ঘটনায়। একটা কথা প্রায়ই অনেক অভিভাবকের মুখে শুনি, এখন নাকি পড়াশুনা আর নাই, পড়াশুনা উঠে গেছে। শিক্ষার্থীদের মুখেও একই কথা। এখন কথা হলো এ ধারণার উদ্ভব কোথা হতে হলো? তাহলে ৫ বছর আমার সন্তান কী করবে? 

আমি একজন শিক্ষক হিসেবে নতুন কারিকুলামের প্রত্যেকটি বিষয় পড়েছি কিন্তু আমার কাছে কখনো মনে হয়নি পড়া নেই, বরং আমার কাছে মনে হয়েছে পড়া যেমন বেড়েছে, সেই সাথে হাতে-কলমের কাজও বেড়েছে। এ কারিকুলাম শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীকে শুধু পাঠ্যবইয়েই সীমাবদ্ধ রাখেনি বরং এই পাঠ সম্পন্ন করতে উভয়কেই রেফারেন্স বই থেকে শুরু করে ইন্টারনেটের সাথেও সংযুক্ত থাকতে হবে, যা অবশ্যই অদূর ভবিষ্যতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অংশগ্রহণকারী হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। এই কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সাথে সমন্বয় সাধনের এক পরিকল্পিত রূপরেখা।  শিক্ষার এই উদ্দেশ্য সফল করা যে একেবারে সহজ কাজ তা কিন্তু নয়। আমার ব্যক্তিগত অভিমত– এই নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকের খাপ খাওয়াতে অনেকটা সময় লেগে যেতে পারে। তাই কোনো নেতিবাচক চিন্তা না করে পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমেই আমরা এ নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে পারি। কারণ এটি আমাদের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। 

‘সেহরি যখন খেয়েছি, রোজা রাখতেই হবে’– এর বাস্তব প্রয়োগ মাঠপর্যায়ে ঘটাতে হবে। তাই এখন পড়াশুনা নাই, স্কুলে যাওয়া-আসা করলেই হবে, শিক্ষকরা চতুর্ভুজ, বৃত্ত, ত্রিভুজ এমনিতেই দিয়ে দিবেন– এ ধরণের ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষক ও অভিভাবককে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ ‘ব্যাধিই সংক্রমক, স্বাস্থ্য নয়’। আমরা যদি শিক্ষার্থীদের মাঝে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেই তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে আর বেশি দেরি নেই। শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা  ও সুশিক্ষিত করাই আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকরে ব্রত হউক এই কামনা করি। 

লেখক : প্রভাষক (বাংলা) কৈলাটি এফ. ইউ. ফাযিল (স্নাতক) মাদ্রাসা।

জনপ্রিয়