
রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি মৌলিক ইবাদত। ইসলামের প্রতিটি ইবাদাতের ন্যায় রোজার মধ্যেও অনেক নিগুঢ় রহস্য নিহিত রয়েছে৷ আমাদের জীবনে রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। রোজার মধ্যে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য এসব শিক্ষা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি৷ পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে রোজার গুরুত্বপুর্ণ দশটি শিক্ষা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো৷
১. তাকওয়া: রোজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করা৷ তাকওয়া অর্জনই রোজার মূল উদ্দেশ্য৷ এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সুরা বাকারা: ১৮৩) কেউ যদি রোজা রেখেও গুনাহের কাজ ছাড়তে না পারে তাহলে তার রোজার উদ্দেশ্য পূরণ হলো না৷
২. সবর বা ধৈর্য : রোজার মাধ্যমে মুমিনগণ দুঃখ কষ্টে সবর করার শিক্ষা পায়৷ রমজানে দীর্ঘ একমাস রোজা রেখে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য ক্ষুধা-পিপাসা ও নফসের খাহেশাত দমন করার কষ্ট তারা অম্লান বদনে সহ্য করে নেয়৷ তাই রমজানকে হাদিস শরিফে সবর বা ধৈর্যের মাস বলা হয়েছে। সুতরাং যেকোনো বিপদ আপদে এবং আল্লাহর ইবাদতের জন্য ধৈর্য রোজার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
৩. সহানুভূতি : রোজার মাধ্যমে বিত্তশালীগণ ক্ষুধার্ত মানুষের ক্ষুধার কষ্ট বুঝতে পারে৷ ফলে তাদের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি হয়৷ এ ছাড়া এ মাসে শ্রমিক ও কর্মচারীদের কাজের বোঝা হালকা করে দিয়ে তাদের প্রতি সহানুভুতি প্রকাশের অনেক ফজিলত রয়েছে৷ তাই রোজার মাসকে সহানুভূতির মাসও বলা হয়৷ অন্যের প্রতি সহানুভূতি অর্জন রোজার অন্যতম শিক্ষা।
৪. আল্লাহর মহব্বত : যার অন্তরে কারো প্রতি ভালোবাসা রয়েছে সে তার সন্তুষ্টির জন্য যেকোনো দুঃখ-কষ্ট স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকে৷ রোজাদার ক্ষুৎপিপাসার কষ্ট স্বীকার করে আল্লাহর প্রতি মহব্বতের প্রমাণ দেয়। তাই রোজাদার আল্লাহ তায়ালার কাছে অত্যন্ত প্রিয়ভাজন হয়। এই ভালোবাসা সারা বছর ধরে রাখা রোজার অন্যমত শিক্ষা।
৫. ইখলাস : অন্যান্য ইবাদতে লোক দেখানো মনোভাবের সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু রোজার মধ্যে লৌকিকতার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কেননা, মানুষ স্বাভাবিকভাবে লোক দেখানোর জন্য দীর্ঘ এক মাস যাবত রোজার কষ্ট স্বীকার করতে পারে না৷ রোজা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যেই করা হয়৷
৬. কুপ্রবৃত্তি দমন : রোজা কুপ্রবৃত্তি দমনের শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার৷ রোজার দ্বারা কুপ্রবৃত্তি অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে৷ ফলে পাপের কাজে তেমন আগ্রহ থাকে না৷ নেক কাজে উৎসাহ বাড়ে৷ তাই রোজাকে পাপ থেকে বাঁচার ঢাল বলা হয়েছে৷ হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রোজা ঢালস্বরূপ। (বুখারি শরিফ: ১৮৯৪) রোজা রোজাদার ও পাপাচারের মধ্যে মধ্যে প্রতিবন্ধক হয়। ফলে রোজাদার গুনাহ থেকে বিরত থাকে। সারা বছর যেন গুনাহ থেকে বাঁচতে পারি রোজা আমাদের এই শিক্ষা দেয়।
পরিশেষে বলা যায়, রোজা একটি মৌলিক ফরজ ইবাদাত হলেও এর মধ্যে আদর্শ ইসলামি জীবন গঠনের মত অনেক শিক্ষা নিহিত রয়েছে৷ আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে রমজানের শিক্ষাসমূহ গ্রহণ করে ইসলামের আলোকে জীবন যাপনের তাওফিক দান করুন৷ আমিন৷
প্রভাষক (আরবী), রাজার ভিটা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, চিলমারী, কুড়িগ্রাম।