ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

ভাল স্বাস্থ্যই সুস্থ ও সতেজ জীবনের চাবিকাঠি

মতামত

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 

প্রকাশিত: ০০:০০, ৭ এপ্রিল ২০২৩

সর্বশেষ

ভাল স্বাস্থ্যই সুস্থ ও সতেজ জীবনের চাবিকাঠি

আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। আন্তজার্তিক ও জাতীয় পর্যায়ে দেশে দেশে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিসটি উদযাপিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়, এর কারণ হচ্ছে জাতিসংঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র প্রতিষ্ঠালগ্ন ৭ এপ্রিল ১৯৪৮। প্রতিষ্ঠার ২ মাস পর ২৪ জুন ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে এই সংস্থার প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জেনেভায়। সে সময় সারা বিশ্বের ৪৬টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। সেই সম্মেলন থেকেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে র ৭ এপ্রিল থেকে প্রতি বছর নিয়মিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি বছর এমন একটি প্রতিপাদ্য বিশ্ববাসীর সামনে নিয়ে আসে যা বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো ‘নো ইউর হেলথ সার্ভিসেস’ যার অর্থ ‘নিজের স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে সচেতন হোন’। এভাবে ৭২ বছর ধরে ৭ এপ্রিল বিশ্ব জুড়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস’। 
২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করবে।  শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ছিল সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। ৭৫ বছর পরে এখন ফিরে দেখার বিষয় এর কতটা পূরণ করতে পেরেছে। জনস্বাস্থ্যের কতটা উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। গত ৭ দশকে মানুষের জীবনযাত্রার মান কতটা উন্নতি হয়েছে সেটাও দেখার বিষয়। এর সাথে সাথে বর্তমান ও আগামী দিনের জন্য মানুষের স্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় কার্যকরী পদক্ষেপসমূহ গ্রহণের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে যে বিষয়টি সবচাইতে গুরুত্ব দিচ্ছে তা হলো সবার জন্য স্বাস্থ্য’ বা ‘হেলথ ফর অল’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাজের প্রতি আমাদের সমর্থন দেখানোর একটি সুযোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যের প্রচার এবং বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি মোকাবেলায় সহায়তা করার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সমর্থন করার মাধ্যমে, আমরা তাদের সমস্ত কিছুর জন্য আমাদের প্রশংসা প্রদর্শন করতে পারি। 
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। শারীরিক সুস্থতার নামই স্বাস্থ্য। অসুস্থ শরীর যার, তার পক্ষে সুখ লাভ অসম্ভব। স্বাস্থ্য এক অমূল্য সম্পদ।ভাল স্বাস্থ্যই সুস্থ ও সতেজ জীবনের চাবিকাঠি। এ কথা আমরা ছোট বেলা থেকেই শুনে আসছি। আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে সাধারণ মানুষের ভাল স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাধা যেমন দারিদ্র, তেমনই আর একটি প্রধান বাধা সচেতনতার অভাব। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতা এমন একটি বিষয়, যার উপর একটি দেশের মানব সম্পদ অনেকাংশে নির্ভরশীল। নাগরিকের সুস্বাস্থ্যের অভাব দেশের উৎপাদনশীলতা কমে, কমে যায় উন্নয়নের গতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের গুরুত্ব এখানেই।
স্বাস্থ্য খাত একটি রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত। বলা হয়ে থাকে, যে দেশের জনগণ স্বাস্থ্যের দিক থেকে এগিয়ে, সে দেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে গতিশীল।

স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই বঙ্গবন্ধু এ খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ণাঙ্গ দেশ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি বিষয়ে সময়োপযোগী ও বিজ্ঞানসম্মত দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বলতে বোঝায় শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক কল্যাণবোধ। শুধু  দুর্বলতার অনুপস্থিতিকে স্বাস্থ্য বলে না।আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল উদ্দেশ্য জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রচার ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দপ্তর অবস্থিত সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সংক্রামক ব্যাধি নির্মূল, স্বাস্থ্য সংরক্ষণ, স্বাস্থ্য শিক্ষা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়ন, গবেষণা, স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়ন, স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টি, মহামারি প্রতিরোধ, শিশুর রোগ প্রতিরোধ, মানসিক স্বাস্থ্য প্রতিরোধ ইত্যাদি লক্ষ্য বাস্তবায়নে শুরু থেকে কাজ করে আসছে। 
আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় পদ সৃষ্টি করা হলেও সে অনুযায়ী জনবল নেই, এক হাজার ৫৮১ জন লোকের জন্য রয়েছেন একজন নিবন্ধিত চিকিৎসক। গ্রামীণ, প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলগুলোতে চিকিৎসক শূন্যতার হার বেশি। অভাব রয়েছে প্রশিক্ষিত নার্সের। অনেক সরকারি হাসপাতালে সরঞ্জাম পাওয়া গেলেও প্রযুক্তিবিদের পদ খালি রয়েছে। জনবল (ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিকস, ল্যাব-টেকনিশিয়ান) নিয়োগের ব্যবস্থাপনা বিকেন্দ্রীকরণ না করা হলে এ অব্যবস্থাপনার সমাধান হবে না। বিকেন্দ্রীকরণের ধাপ নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করে নির্ধারিত করতে হবে। শুধু চিকিৎসক নিয়োগ দিলে হবে না, কর্মস্থলে তাদের ধরে রাখাও জরুরি। 
গত ৫২ বছরে দেশের স্বাস্থ্য খাতের বিরুদ্ধে সব থেকে বড় অভিযোগ হচ্ছে ‘অব্যবস্থাপনা’। সত্যিকার অর্থেই দেশে পেশাদার একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। তৃণমূল থেকে যত ওপরে যাওয়া যায় সর্বত্রই একই দৃশ্য প্রতীয়মান হয়। আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হচ্ছে, জিডিপির পাঁচ শতাংশের মতো অর্থ স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া। বাংলাদেশে এক যুগের অধিককাল ধরে বাজেটে জিডিপির এক শতাংশের কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত অর্থেরও কম-বেশি ৭০ শতাংশ বেতন-ভাতা ইত্যাদির মতো খাতে খরচ হয়। বাকি অর্থ স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ব্যবহৃত হওয়ার কথা, যা নিতান্তই অপ্রতুল। তবে দেশের জনসাধারণের সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ত্রুটিগুলো নিরসন করে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে তা বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।
পরিশেষে বলতে চাই,সুস্থ জীবনের প্রয়োজন অনুধাবন করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের মূল লক্ষ্য। আমারা আমাদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল নই বিদায় আমরা আমাদের খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম ও কাজের প্রতি তেমন গুরুত্ব দেই না। আর আমরা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি তখনি সুস্থতার অনুধাবন করি। আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে যে, সুস্থতাই একজন মানুষের বড় নেয়ামত।

বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান রোগ-ব্যাধির কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে।প্রতিবছর নতুন নতুন মহামারি, রোগব্যাধির সৃষ্টি হচ্ছে, ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে সবার সামনে তুলে ধরা হয় এবং এই ধরনের মহামারীকে মোকাবেলা করার জন্য একটি থিম তৈরি করে সঠিক স্বাস্থ্য সেবা সকলের জন্য নিশ্চিত করার লক্ষে সারা বিশ্বজুড়ে অসংখ্য ইভেন্ট এবং সেবার আয়োজন করা হয়।

মানুষের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং আচরণ থেকে মুক্তি পাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত, বিশেষ করে যারা উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য কোনও অসুস্থতার জন্য ওষুধ খান। নিজ স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পাশাপাশি, এলাকার অনন্যা মানুষ ও আত্মীয়-স্বজনরাও যেন তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হন সে দিকে লক্ষ্য রাখা। স্বাস্থ্য দিবসের একটি বড় উপাদান হল একটি স্বাস্থকর জীবনধারা এবং আপনার চারপাশের একটি স্বাস্থ্যকর পৃথিবী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ রকম আরো আটটি দিবস পালন করে থাকে,  প্রতিটিই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রচার মূলক কাজ। যার মাঝে অন্যতম গুরুত্বপুর্ণটি হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। অন্যগুলি, বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস, বিশ্ব রোগ প্রতিরোধ সপ্তাহ, বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস, বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবস, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস, বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস এবং বিশ্ব এইডস দিবস। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা ও উদ্বেগগুলির প্রতি সাধারণ জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এটি শুরু থেকেই একটি বার্ষিক ইভেন্ট হিসেবে পালিত হচ্ছে।  

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট 

জনপ্রিয়