ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

৩৬ হাজার পরীক্ষার্থীর দায় কার

মতামত

বোরহানুল হক সম্রাট, প্ল্যানিং এডিটর 

প্রকাশিত: ০০:২০, ৯ মে ২০২৩

সর্বশেষ

৩৬ হাজার পরীক্ষার্থীর দায় কার

বোরহানুল হক সম্রাট, প্ল্যানিং এডিটর 

পদ্মার ওপারে মাদারীপুরে ৭০ একর জায়গা জুড়ে নির্মাণ হচ্ছে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ও সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক। ১৫শ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ইনস্টিটিউট হয়ে উঠবে স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতীক। ৪১ তলার টাওয়ার হবে সেখানে, যেখান থেকে তৈরি হবে বিশ্বমানের প্রযুক্তিবিদ। আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশের প্রথম জুডিসিয়ারি একাডেমিও হবে শিবচরে। এ নিয়ে গত কয়েকমাসে সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের শিবচরে গমন ও তাদের বক্তব্য আমাদের আশাবাদী করে। কিন্তু এর সাথে আরেকটি খবর শিক্ষা বিশ্লেষক ও গবেষকদের ভাবায়। পাশের জেলা শরীয়তপুরের এ বছরের এসএসসিতে ২০৫ জন ছাত্রী পরীক্ষা দিতে আসেননি, যাদের অধিকাংশের পেছনে রয়েছে বাল্যবিয়ের গল্প। 
গোটা দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় এবার অনুপস্থিতির সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজার ছুঁই ছুঁই। এ সংখ্যা পরীক্ষা এগুনোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। প্রথমদিনের পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন ৩১ হাজার ৪৪৭ জন। দ্বিতীয় পরীক্ষায় ৩২ হাজার ৩৫৬। চতুর্থ দিনে ৩৫ হাজার ৮৬৫ জন অনুপস্থিত থাকার কথা জানায় আন্ত:শিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি।  

বাল্য বিয়ের স্রোতের বিপরীতে লড়াই, অভাব-অনটন-বাস্তবতা শেষ করে প্রচলিত সব নিয়ম কানুন মেনে একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য যখন রেজিস্ট্রেশন করেন তখন নিশ্চয়ই তিনি পরীক্ষার হলে বসবেন না এটা কল্পনাতেও আনতে পারেন না। কিন্তু প্রতি বছর অকল্পনীয় ঘটনাটাই ঘটে চলেছে।  
কিন্তু কেনো? কী কারণ এমন ড্রপ আউটের? এ নিয়ে কোনো পরিসংখ্যান কারো কাছেই নেই। কোনো গবেষণাও না। দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে কয়েকজন শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে অবশ্য একটা ধারণা পাওয়া গেছে। তাদের অনুমান, ছাত্রীরা পরীক্ষায় অনুপস্থিত বাল্যবিয়ের কারণে। আর ছাত্ররা পরিবারের প্রয়োজনে আয়মুখি কর্মে জড়িয়ে পড়ছেন।   
এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে আমরা দেখেছি, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে করোনা মহামারির মধ্যে দেশের অর্ধেকের বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪ লাখ ৮১ হাজার শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ৪৭ হাজারের বেশি ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়ে যায়। আর শিশুশ্রমে যুক্ত হন প্রায় ৭৮ হাজার শিক্ষার্থী। প্রতিবেদনটি তৈরি করতে মাউশি অধিদপ্তর দেশের ২০ হাজারের মধ্যে  ১১ হাজার ৬৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের তথ্য সংগ্রহ করে।
আর সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি–২০২৩ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাল্যবিয়ের হারে বাংলাদেশ এখন শীর্ষে। প্রতিবেদনে বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে ২০০৬ থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়সের আগেই ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। 
কিন্তু, কেনো এমনটা হচ্ছে? মা-বাবারা মেয়েদের পরীক্ষার হলে পাঠানোর চেয়ে  পরের ঘরে দিয়ে দেয়াকেই সুবিধাজনক মনে করেন কেনো? সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের পথ ছেড়ে কেনো স্কুল থেকে নিয়ে কাজে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন ছেলেদের? 
শিক্ষাবোর্ডের পরিসংখ্যান বলছে, করোনার আগে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলো ৮ হাজার ৫২০ জন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ৯ হাজার ৬৪২, ২০১৯ এ ১০ হাজার ৩৮৭, ২০২০ এ ১২ হাজার ৯৩৭, ২০২১ এ ১৮ হাজার ৮২০ এবং ২০২২ এ ৩৫ হাজার ৮৬৫। আর এ বছর এখন অবধি ৩৫ হাজার ৮৬৫। অর্থাৎ ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের তুলনায় এ বছর অনুপস্থিতির সংখ্যা প্রায় চার গুণ। 
দেশের স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি ও শিক্ষার উন্নয়নে সরকার যখন নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে তখন এসএসসিতে এই বিপুল অনুপস্থিতি শঙ্কা জাগানিয়াই বটে! 
আমরা চাই, মাঠ পর্যায়ের কারো অবহেলায় সরকারি উদ্যোগ যাতে মাঠেই মারা না যাক। আমরা চাই, ড্রপ আউটের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করে স্কুল বিমুখদের স্কুলে ফিরিয়ে আনা হোক। শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয়, তাহলে সেই মেরুদণ্ড শক্তিশালী করতে ড্রপ আউট ঠেকানোর কোনো বিকল্প কিন্তু সত্যিই নেই। এ বিষয়ে যতো দ্রুত উদ্যোগ নেয়া যায় ততোই মঙ্গল।

জনপ্রিয়