ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

প্রধানমন্ত্রীই পারেন কুমিল্লা বিমানবন্দরকে চালু করতে 

মতামত

ইয়াসমীন রীমা

প্রকাশিত: ০০:০০, ১৫ মে ২০২৩

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীই পারেন কুমিল্লা বিমানবন্দরকে চালু করতে 

কুমিল্লা বিমানবন্দরের সিগন্যাল ব্যবহার করে সরকার প্রতি মাসে ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা আয় করছে। কুমিল্লা বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বন্দর চালু করতে সব কিছুই আছে, দরকার সামান্য উদ্যোগ। কুমিল্লা বিমানবন্দরসহ দেশের ৭টি বিমানবন্দর নতুন করে চালুর কথা ভাবছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। যদিও এ ভাবনার শুরু হয়েছে অনেক আগেই।
কুমিল্লা বিমানবন্দর ছাড়া বাকি ৬টি বিমানবন্দর হলো -ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, বগুড়া, শমসেরনগর ও তেজগাঁও। দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতের বিকাশ ও যাত্রী পরিবহণ বাড়াতেই এ উদ্যোগ। কুমিল্লাবাসী দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা বিমানবন্দর চালুর জন্য দাবি জানিয়ে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান ও মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং বিভিন্ন বিমান পরিবহন কোম্পানির কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু কোনো ইতিবাচক ফলাফল আসেনি। 
কুমিল্লাবাসীর বক্তব্য, বিমানবন্দরের সবকিছুই আছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং উদ্যোগের অভাবে এখানে বিমান ওঠানামা করে না। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লা ইপিজেড স্থাপনের সময় স্টল বিমান সুবিধা প্রদানের কথা উল্লেখ করেছিলেন। সেটিও পূরণের অপেক্ষায়। ওয়াদা পূরণ হলে কুমিল্লা ইপিজেডে বিনিয়োগ বাড়তো এবং আশপাশের দেশে কুমিল্লা থেকেই মানুষ বিমানে যাতায়াত করতে পারতো।
তবে বেবিচকের ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দের কর্মপরিকল্পনা এবং সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কুমিল্লা বিমানবন্দরসহ দেশের ৭টি বিমানবন্দর নতুন করে চালু করা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো, বিগত ৫০ বছরে বিমানবন্দরগুলোর কোনোটিতেই বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করেনি। তবে কুমিল্লায় দু’দফায় বিমান ওঠানামা করে আবারো বন্ধ হয়ে যায়।

তথ্যমতে, এসব বিমানবন্দরের রানওয়েতে গরু, ছাগলসহ গবাদি পশু অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো কোনোটির চারদিকে বাউন্ডারি দেয়ালসহ কোনো ধরনের নিরাপত্তা চৌকিও নেই। রানওয়েতে ক্রিকেট খেলেন স্থানীয়রা। আবার কোনো কোনো রানওয়েতে বড় গাছ জন্মেছে। ঘাস বড় হওয়ায় অনেক রানওয়ে দেখাও যায় না। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত থাকায় রানওয়ের শক্তি পিসিএন (পেভমেন্ট ক্ল্যাসিফিকেশন নাম্বার) নষ্ট হয়ে গেছে। সংস্কার না করায় কোথাও কোথাও রানওয়ের পিচ ঢালাই ও ব্লক ভেঙে গেছে।
বেবিচকের পিএন্ডডিকিউ বলেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে ২৮টি বিমানবন্দর রয়েছে। এগুলো ব্রিটিশ সরকারের আমলে তৈরি। সব বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার ফুটের মধ্যে। রানওয়েগুলো বর্তমানে যাত্রীবাহী বিমান পরিচালনায় অনুপযুক্ত। পর্যায়ক্রমে এই রানওয়েগুলোর দৈর্ঘ্য ৬ থেকে ৮ হাজার ফুটে উন্নীত করার টার্গেট আছে বেবিচকের। এছাড়া রানওয়ের পিসিএন ৩০ থেকে ৬০ ফুট করার চিন্তাও আছে। কাজ শেষ করা গেলে এটিআর কিংবা ড্যাস-৮ কিউ ৪০০ মডেলের ছোট ছোট যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট অপারেশন শুরু করা সম্ভব হবে।
কুমিল্লা বিমানবন্দর ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে চালু ছিলো। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে এটি পুনরায় চালু করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় দুই সপ্তাহের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ অঞ্চলে দ্রুত শিল্পায়নের ফলে বিমান চলাচলের চাহিদা বদলেছে। তাছাড়া এ জেলায় একটি ইপিজেড থাকলেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা রাজধানী থেকে সহজে সেখানে যেতে পারেন না। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেছেন, ৯০-এর দশকে যখন কুমিল্লা বিমানবন্দর ফ্লাইট স্থগিত করেছিলো, তখন যানজট বলতে কিছুই ছিলো না।
এখন তিন ঘণ্টা সময়েও ঢাকা থেকে সড়কপথে কুমিল্লা পৌঁছানো যায় না। অথচ ফ্লাইটে মাত্র ২৫ মিনিটে কুমিল্লা যাতায়াতের সুবিধা মিলবে। বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু হলে চাঁদপুর ও ফেনী অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার আরো ভালো সংযোগ তৈরি হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা, ব্যবস্থাপনা, যন্ত্রপাতি, জনবল থাকার পরও শুধু উদ্যোগের অভাবে তিন যুগ ধরে বন্ধ রয়েছে কুমিল্লা বিমানবন্দর। কুমিল্লা বিমান বন্দর সূত্রে জানা যায়- কুমিল্লা বিমানবন্দর এখনো চালু অবস্থাতেই আছে। শুধু বিমান ওঠানামা করে না। এ বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী সব বিমানকে আকাশপথের সিগন্যাল দেয়া হয়। আর এ কাজ করে কুমিল্লা বিমানবন্দর প্রতি মাসে আয় করে বিপুল পরিমান অর্থ। কুমিল্লা বিমানবন্দরে নেভিগেশন ফ্যাসিলিটিজ, কন্ট্রোল টাওয়ার, ভিইচএফ সেট, এয়ার কমিউনিকেশন, যন্ত্রপাতি, ফায়ার স্টেশন, ফায়ার সার্ভিসহ সব সুবিধা রয়েছে।
বাংলাদেশে ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ৫টি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর এবং ৭টি সট টেক অব ল্যান্ড ল্যান্ডিং (স্টক) বিমানবন্দর রয়েছে। এই ৭টি বিমানবন্দররের মধ্যে কুমিল্লা বিমানবন্দর একটি। বন্দরের ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেছেন, এই বিমানবন্দর থেকে সরকার ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা আয় করে। যা সম্পূর্ণ তদারকি করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রতিদিন আমাদের সিগন্যাল ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক রুটের ৩৫ থেকে ৪০টি বিমান। এখানে সব আছে, শুধু উদ্যোগের অভাবে এখানে বিমান উঠানামা করে না।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের এখানে ২০ জন কর্মরত রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে একটু উদ্যোগ নিলেই বিমানবন্দরটি সচল করা সম্ভব। এজন্য রানওয়ে মেরামতসহ কিছু কাজ করতে হবে। পাশাপাশি আরো ২০-২২ জন লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। আমরা চাই দ্রুত বিমানবন্দরটি চালু হোক।
একটি দেশের পরিপূর্ণ সামগ্রিক উন্নয়ন যেমন একটি রাজনৈতিক সরকার ছাড়া কেউ করতে পারে না, ঠিক তেমনি একটি জেলার পরিপূর্ণ উন্নয়ন করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন সেই জেলার রাজনৈতিক নেতৃত্বের কতোটুকু সদ্বিচ্ছা আছে তার উপর। কারণ, নিজ নিজ জেলার প্রতি সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, নিশ্চয়ই বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বা সরকারের অন্য যে কোনো কাঠামোর সেই দায়বদ্ধতা নেই এবং থাকার কথাও না। বর্তমানে কুমিল্লা ইপিজেড ও স্থলবন্দরসহ যে কোনো বিবেচনায় বিমানবন্দর চালু করা একেবারেই সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। এই বিমানবন্দরটি এখনো বছরে আড়াই কোটি টাকার উপর সিগন্যাল ব্যবহার করে আয় করে। শুধুমাত্র রানওয়েসহ কিছু অবকাঠামো ও কতক জনবল নিয়োগ দিয়েই বন্দরটি চালু করা যায়। কিন্তু চালু হচ্ছে না। 
যে কারণে কুমিল্লা বিমান বন্দরটি চালু হচ্ছে না, একই কারণেও হচ্ছে না কুমিল্লাবাসীর প্রাণের ও আবেগের বিভাগ। সব কিছুর মূলে রয়েছে সেই রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদ্বিচ্ছা। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আজ কুমিল্লার ১১ জন নির্বাচিত এমপি ও ২ জন সংরক্ষিত এমপি- এই ১৩ জন এমপি মিলে প্রধানমন্ত্রীকে একত্রিত হয়ে বলুক, আমরা কুমিল্লা নামে বিভাগ চাই, আমরা দ্রুত কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু চাই । ইনআল্লাহ্ স্বল্প সময়ের মধ্যে সব দাবি বাস্তবায়ন হবে। যেমন হয়েছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দাবি। সেদিন কুমিল্লার উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় কুমিল্লার সকল এমপি একত্রিত হয়ে মিটিংয়ে রেজুলেশন করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর  কাছে গিয়ে বলেছিলেন, আমরা সব এমপি এসেছি, কুমিল্লায় বিশ্ববিদ্যালয় চাই। ফলশ্রুতিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে। আবারো সেভাবেই আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যেতে পারি। আশা করি তিনি কুমিল্লাবাসীকে আশাহত করবেন না। অচিরেই পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দরের স্বপ্ন পুরণ হতে পারে কুমিল্লাবাসীর। 

লেখক : সাংবাদিক

জনপ্রিয়