
শিক্ষা গুরুর মর্যাদা কবিতা থেকে আমরা শিক্ষকদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ উপলব্ধি করতে পারি। শিক্ষকতা হচ্ছে একটি মহান পেশা। পৃথিবীতে যতগুলো পেশা আছে তার মধ্যে শিক্ষতাকে মর্যাদার চোখে দেখা হয়। পৃথিবীতে মা বাবার পরের স্থান শিক্ষকের। তাই দেশ ও সমাজে শিক্ষকের গুরুত্ব অপরিসীম।
১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম অধবেশনে ৫ অক্টোবরকে বিশ^ শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তারপর বাংলাদেশেসহ বিশে^র প্রায় ১০০টি দেশে প্রতি বছর ৫ অক্টোবরকে বিশ^ শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
শিক্ষকতায় নতুনদের আগমন এবং তাদের জন্য ক্যরিয়ারের পথ তৈরিকরণ, আবার এভাবেও বলা যেতে পারে তরুণরাই শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশ করবেন এবং তারাই এ পেশাকে পেশাগত মর্যাদায় উন্নীত করবেন। শিক্ষকতা পেশায় এখন মেধাবীরা এসেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাঠদানের নতুন কৌশল অনয়ন করে শিক্ষা ব্যবস্থায় যুগোপযোগী পরিবর্তন এনেছেন। প্রতি বছর বিশ^ শিক্ষক দিবসের একটি প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে। বিশ^ শিক্ষক দিবস ২০২৩ এর প্রতিপাদ্য বিষয়- “পরিবর্তনশীল গতিপথ রূপান্তিত শিক্ষা” এই মূল বিষয় সামনে রেখে বাংলাদেশ আগামী ০৫ অক্টোবর বিশ^ শিক্ষক দিবস পালন করবে।
দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৭ হাজারেরও বেশি শিক্ষকের পদশূণ্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের শূণ্য পদের সংখ্যা ২৯ হাজার ৮৫৮। আমরা মনেকরি, শূণ্যপদ পূরণে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।”
বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে চালাতে হলে সহায়ক স্টাফ জরুরী। স্কুলে শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই। সেজন্য শূণ্যপদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে পাঠদান উপযোগী অনুকূল পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই বলে মনেকরি। মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে মানসম্মত শিক্ষক প্রয়োজন। এমনিতেই দেশে সহকারী শিক্ষকের পদ শূণ্য। এরপর অনেক সহকারি শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের বাড়তি দায়িত্ব পালন করেতে হচ্ছে। তাছাড়া কর্তব্যরত শিক্ষকদেরও অনেক সময়ে বিভিন্ন ধরণের ছুটি তথা নানা রকম প্রশিক্ষণে থাকতে দেখা যায়।
প্রতি বছরই প্রাথমিক বিদ্যায়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষক সংকট দূরীকরণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সহকারী শিক্ষকদের চলতি দায়িত্ব পালনসহ প্রধান শিক্ষকপদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শূণ্যপদগুলো পূরণ করা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের শূণ্যপদের বিপরীতে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রতিটি বিদ্যালয়ে নূন্যতম চারজন শিক্ষক থাকার বিধান থাকলেও অধিকাংশ বিদ্যালয়ে ২-৩ জন শিক্ষক রয়েছে। ৪০০ কিংবা তার চেয়েও বেশি ছাত্র-ছাত্রীদের ৫ জন শিক্ষকের স্থলে ২ জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান দিতে হচ্ছে। এতে করে পাঠদানে অনেক কষ্ট হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অফিস সহকারী না থাকর কারণে প্রধান শিক্ষককে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় দাপ্তরিক কাজ করতে হচ্ছে।
শিক্ষকরা অনেক বঞ্চনার শিকার। সেই সাথে আছে তাদের পুঞ্জীভূত বেদনা। তবে এই পেশাকে ছোট করে দেখার কোন উপায় নেই। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে সব ধরণের সমস্যা দূর করে পরিকল্পিত শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তা না হলে আমাদের এসজিডি অর্জনও বাধাগ্রস্থ হবে। শিক্ষকদেরকেও এই শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য দেশকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের সন্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন।
লেখক : যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ