আজ আন্তর্জাতিক ৩৩তম প্রবীণ দিবস। এ বছরের দিবসটির প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় প্রবীণদের জন্যে প্রদেয় প্রতিশ্রুতি পূরণে প্রজন্মের ভূমিকা’। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এ দিবসটি পালিত হবে। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ প্রতিবছর ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রবীণদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি বার্ধক্যের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এ দিবসটি পালন শুরু হয়।
জাতিসংঘ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নাগরিকদের জন্য ৬০ বছর ও তদূর্ধ্ব এবং উন্নত দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য ৬৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের প্রবীণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর বিংশ শতাব্দীতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতি, সচেতনতা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন মৃত্যুহার যেমন হ্রাস করেছে; পাশাপাশি মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। ফলে বিশ্ব সমাজে বয়স্কদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’–এর প্রাথমিক প্রতিবেদন বলছে, দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৫৩ লাখ ২৬ হাজার ৭১৯। তারা মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনশুমারিতে এ হার ছিলো ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
জনশুমারি বলছে, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম। অন্যদিকে প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। জাতিসংঘের জনসংখ্যা উন্নয়ন তহবিলের প্রাক্কলন বলছে, ২০২৫–২৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রবীণের সংখ্যা হবে ২ কোটি। ২০৫০-এ ওই সংখ্যা হবে সাড়ে ৪ কোটি, যা তখনকার জনসংখ্যার ২১ শতাংশ। ২০৬১ খ্রিষ্টাব্দে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি প্রবীণ জনগোষ্ঠী হবে। সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা বলছে, দেশে খানার আকৃতি বা পরিবার ছোট হয়ে আসছে। পরিবার ছোট হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। বার্ধক্যের কারণে উপার্জন কমে যায়, অধিকাংশ উপার্জনহীন হয়ে পড়েন। অর্থনৈতিকভাবে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়। তাদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসার ব্যবস্থা দেশে এখনো চালুই হয়নি। তারা ঠিক সময়ে চিকিৎসা পান না। এমন মানুষের সংখ্যা দেশে বাড়ছে। মানুষের শৈশবের সোনালি সকাল শেষ করে তারুণ্য আর যৌবনের রোদেলা দুপুর পাড়ি দিয়ে, মাঝ বয়সের ব্যস্ত বিকালটাও যখন ও চলে যায়, তখনই জীবন সায়াহ্নের গোধূলি বেলা হয়ে আসে বার্ধক্য।
এই সময়টা আসলে মানবজীবনের শেষ অধ্যায়। আমাদের সমাজে বয়স্কদের স্বাস্থ্য বা অন্যান্য সমস্যা নিয়ে আমরা আসলে তেমন কিছু ভাবি না। বয়স্করা তো আমাদের পরিবারের সৌন্দর্য। তাদের দিকে আমাদের গুরুত্ব দেয়া উচিত। কারণ. তারা পরিবারের শ্রদ্ধার পাত্র। তারা অসুস্থ থাকলে গোটা পরিবারেই অশান্তি নেমে আসে। এ জন্য প্রথম থেকেই তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন থাকতে হয়। তা ছাড়া মানুষের বয়স যতো বাড়ে মানুষ ততো একাকী হয়ে পড়ে। এটা বয়স্কদের জন্য পীড়াদায়ক। সুতরাং যতোটা সম্ভব তাদের সঙ্গ দেয়া উচিত। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা দিন দিন কমতে থাকে, যার ফলে প্রবীণ ব্যক্তিদের বেলায় বেশ কিছু অসুস্থতা প্রায় সবার মধ্যে দেখা দিয়ে থাকে। আর শুধু শারীরিক রোগ ব্যাধিই নয়, প্রবীণদের সমস্যাটা আসলে বহুমাত্রিক। তারা মানসিক, পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবেও সমস্যায় জর্জরিত। আসলে মানুষ যখন বার্ধক্যে উপনীত হন, তখন তার নিজের মধ্যেই কিছু কিছু জিনিস দানা বেধে ওঠে, যেমন- শারীরিক অসামর্থ্য, অসহায়ত্ব, পরনির্ভরশীলতা, অদৃষ্টের উপর সমর্পণতা ও অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা। এগুলোর কারণে মানসিক যন্ত্রণা থেকে শুরু করে নিজেকে অবাঞ্ছিত, পরিবারের বা সমাজের বোঝা মনে করেন। অনেক প্রবীণই বিষণ্নতায় ভোগেন। অনেক সময় এমন অযৌক্তিক ও শিশুসুলভ আচরণ তাদের মধ্যে প্রকাশ পায়, যাকে অনেকেই দ্বিতীয় শৈশব বলে মনে করেন।
প্রবীণদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসে না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রবীণরা যৌবনে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। পরিবারের সদস্যদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, আরাম আয়েশের দিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করেছেন। জীবনের এ পর্যায়ে এসে তারা অবহেলিত হবেন, এটা মেনে নেয়া যায় না। ব্রিটিশ সরকার এ উপমহাদেশে ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন চালু করে। প্রায় ৭২ বছর পর ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার বয়স্কভাতা চালু করে। প্রথম পর্যায়ে ৫০ কোটি, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ১৩০৬ কোটি, পরবর্তী বছরে ১৪৪০ কোটি, ২০১৯-২০ বাজেটে ২০৬৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
গত বছর (২০২১-২২) স্বাস্থ্য খাতের জন্য ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিলো। এবার ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ বেড়েছে ৪ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৮৪ লাখ প্রবীণকে ৫০০ টাকা হারে এ ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু ভাতা দেয়া হচ্ছে মাত্র ৮৪ লাখ প্রবীণকে। ৬৬ লাখেরও বেশি প্রবীণ এ বয়স্ক ভাতার আওতায় নেই।
সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য বলছে, দেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ ৯৭ লাখ ২৭ হাজারের কিছু বেশি। তারা মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। শুধু তাই নয়, দুর্মূল্যের এ বাজারে মাত্র ৫০০ টাকায় কী পাওয়া যায়? বৃদ্ধ বয়সে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরনের রোগের ওষুধ ও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। আর প্রবীণ বা বয়স্ক ব্যক্তিরা সম্মানিত। তারা দ্বিতীয় শিশু। আমাদের মনে রাখা উচিত-আজ যারা প্রবীণ তারাও অতীতে তার পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির কল্যাণে অনেকেই অনেক কিছু করে গেছেন। তাদের প্রতি যেনো কোনো রকম অবহেলা না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা যারা নবীণ তারা যেনো ভুলে না যাই যে, আমাদেরও একদিন এই অবস্থায় উপনীত হতে হবে। আজ যদি আমরা তাদের প্রতি অবহেলা করি, তাহলে আমাদেরও এই রকম অবহেলার শিকার হতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রবীণরা অবহেলিত, উপেক্ষিত, সমাজে ও পরিবারে অনেকের কাছে বোঝাস্বরূপ। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের সবার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া অবশ্য কর্তব্য।
আর তরুণ বা যুবকরা বয়স্কদের চেয়ে অনেক বেশি ঠাণ্ডা বা গরম সহ্য করতে পারে। গরমকালে বেশি তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্করা ঘামে এবং তাদের রক্তনালি সম্প্রসারিত হয়। শীতকালে রক্তনালি সংকুচিত হয় বলে তাপক্ষয় কম হয়। রক্তচাপের মতো শরীরের স্বাভাবিক তাপ সংরক্ষণ প্রক্রিয়া অকার্যকর হয়ে যায় বলে বয়স্কদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অনেক ওটিসি ও প্রেসক্রিপশন ড্রাগের কারণে বয়স্ক মানুষের অসামঞ্জস্যপূর্ণ তাপমাত্রার উদ্ভব হয়, যা বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। বয়স্ক মানুষের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে এক বা একাধিক জটিল ও মারাত্মক রোগে ভোগে।
হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, হতাশা, অবসাদগ্রস্ততা, ডিমেনশিয়া এসব জটিল রোগের মধ্যে অন্যতম। এসব রোগের চিকিৎসায় রোগীকে অসংখ্য ওষুধ সেবন করতে হয়। লিভার, কিডনি বা হৃৎপিণ্ড সুষ্ঠুভাবে কাজ না করলে ওষুধ কাজ শেষ করে দ্রুত শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে না। হৃৎপিণ্ড স্বাভাবিক পরিমাণ রক্ত সঞ্চালন করতে না পারলে কিডনি পর্যাপ্ত রক্ত পায় না বলে ওষুধ নিঃসরণ কমে যায়। এতে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেড়ে যায়। লিভারের সমস্যা থাকলে ওষুধের মেটাবলিজম (রাসায়নিক রূপান্তর) হ্রাস পাবে বা বন্ধ হয়ে যাবে। সেই ওষুধ অনাকাক্সিক্ষত সময় ধরে শরীরে অবস্থান করবে এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। এসব সমস্যার জন্য একটি গুরুতর সীমাবদ্ধতা দায়ী। প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর আমরা ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করি মাত্র তিন মাসের জন্য। অথচ এসব ওষুধ আমরা বয়স্ক মানুষকে প্রদান করি ১৫ থেকে ২০ বছর বা তারও বেশি সময়ের জন্য।
তরুণ বা যুবকের মধ্যে তিন মাসের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালিয়ে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ষাটোর্ধ্ব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে ওষুধ প্রয়োগের বিধান চালু করা এবং তা কয়েক দশক ধরে অব্যাহত রাখা যুক্তিযুক্ত ও বিজ্ঞানসম্মত নয়। শিশু ও মহিলাদের বেলায় পর্যাপ্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন না করে ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগের কারণে অতীতে বহু মানবিক বিপর্যয় ঘটে গেছে। থ্যালিডোমাইড ট্রাজেডি এর অন্যতম।
ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এখন নিয়ম করেছে, যে বয়সের মানুষ ওষুধ গ্রহণ করবে, সেই বয়সের মানুষের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন করতে হবে। তরুণ ও বয়স্ক মানুষের মধ্যে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভীষণ তারতম্য পরিলক্ষিত হয়, যা সচরাচর রোগী বা চিকিৎসক বুঝতে পারে না। এ কারণে বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে প্রেসক্রিপশন ড্রাগ প্রদানে সতর্ক হতে হবে। তাদের কম মাত্রায় কমসংখ্যক ওষুধ প্রদান করা বাঞ্ছনীয়। বয়স্ক মানুষের ওষুধ প্রদানের সময় তাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং বিভিন্ন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করে ওষুধ প্রদান আবশ্যক। নতুবা ওষুধের অনাকাঙ্ক্ষিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বিষক্রিয়া বা মিথষ্ক্রিয়ার কারণে অযথা রোগীকে ভুগতে হবে, নতুবা মরতে হবে।
* প্রথমে মনে রাখতে হবে প্রবীণ বয়োজ্যেষ্ঠরা আমাদের পরিবারেরই অংশ। পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মতো তার সঙ্গে আচরণ করতে হবে। আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হওয়া উচিত সবসময় প্রবীণদের আদরযত্ন দিয়ে শিশুদের মতো প্রতিপালন করা। তাদের প্রতি মায়ামমতা, ভালবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। কোনোক্রমেই তাদের মধ্যে যেনো এই ধারণা না হয় যে, তারা আমাদের জন্য একটি অতিরিক্ত বোঝা।
* পৃথিবীর অনেক দেশে প্রবীণদের জন্য বৃদ্ধনিবাস বা ওল্ডহোমের ব্যবস্থা আছে। প্রয়োজনে সেরকম ব্যবস্থা আমাদের দেশেও করতে হবে। তাই বলে অযত্ন অবহেলায়, দায় এড়ানোর জন্য তাদের যেন এসব বৃদ্ধনিবাসে ঠেলে দেয়া না হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
* আমাদের দেশে শুধু সরকারি কর্মচারী চাকরি হতে অবসর নেয়ার পর সামান্য পরিমাণ পেনশন ভাতা পেয়ে থাকেন। প্রবীণ কি শুধু তারাই হবেন? সরকারি চাকরির বাইরে যারা অন্য পেশায় আছেন বা ক্ষেতে খামারে কাজ করেন, তারা কি বৃদ্ধ হবেন না? তাদের জন্যও সুযোগ-সুবিধা থাকা জরুরি। সরকারকে তা অবশ্যই ভেবে দেখা উচিত।
* পেনশন বা বয়স্কভাতা হিসেবে যে অর্থ দেয়া হয়, তার পরিমাণটাও সম্মানজনক হওয়া উচিত, যাতে তারা খেয়েপড়ে চলতে পারেন এবং পরনির্ভরশীল হতে না হয়।
* প্রবীণরা যাতে স্বল্প ব্যয়ে উন্নত চিকিৎসা পেতে পারেন, সেজন্য পর্যাপ্ত হাসপাতালের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি হাসপাতালে তাদের জন্য আলাদা বিছানা বরাদ্দ থাকা উচিত। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং ওষুধ তাদের বিনামূল্যে বা অল্পদামে দেয়া উচিত। এ ছাড়া প্রবীণদের চিকিৎসার জন্য বড় হাসপাতালগুলোতে বিশেষায়িত বিভাগ খোলা উচিত।
* পরিবারের সদস্যদের বাছেলেমেয়েদের মনে রাখা উচিত, তারা যেন তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
পরিশেষে বলতে চাই, সুস্থ সবল প্রবীণের মেধা ও অভিজ্ঞতাকে রাষ্ট্র এবং সমাজের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজে লাগানো যেতে পারে। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ও কর্মক্ষমতার সঙ্গে যদি প্রবীণদের মেধা-মনন-অভিজ্ঞতা সংযোগ করা যায়, তা দেশের উন্নয়নের গতি আরো বাড়বে। আর বিভিন্ন সামাজিক, পারিবারিক, ধর্মীয় এমনকি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যথাসম্ভব প্রবীণদের আমন্ত্রণ জানানো উচিত, যাতে তারা নিজেদের কোনোক্রমেই অপ্রয়োজনীয়, উপেক্ষিত বা অবহেলিত মনে না করেন। পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের সমাজব্যবস্থারও দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। একক পরিবার, জনসংখ্যা, দারিদ্র্যতা বৃদ্ধি, দ্রুত শিল্পায়ন আর শহরমুখী প্রবণতা অনেক কিছুই আমাদের আদর্শ ও মূল্যবোধের মূলে আঘাত করে প্রবীণদের অবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে বা খারাপের দিকে নিচ্ছে।
ফলশ্রুতিতে প্রবীণরা অযত্ন, অবহেলিত, একাকীত্ব, সমাজের এমনকি পরিবারের বোঝা হয়ে যাচ্ছেন। মনে রাখা উচিত, আমাদেরকে তারা যেভাবে মায়ামমতা ভালবাসা, এমনকি নিজের সর্বস্ব দিয়ে লালন-পালন করেছেন, তারাও আমাদের কাছে সেটাই আশা করেন। আমার একটি ক্ষুদ্র পরামর্শ হচ্ছে, ওষুধের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করুন এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত জীবনযাপন করুন। অসুস্থ হওয়ার আগেই আজীবন সুস্থ থাকার ব্রত গ্রহণ করুন। আর মনে রাখতে হবে, আজকের প্রবীণদের সঙ্গে আমাদের ব্যবহার ভবিষ্যতের জন্যে একটা ইনভেস্টমেন্ট। আমাদের সন্তানরা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা আমাদের অনেক কিছুই অনুকরণ করে শেখে। আমরা চাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কর্তৃক সংবিধানে প্রবীণদের যে সামাজিক নিরাপত্তা সন্নিবেশিত করেছেন তার সফল বাস্তবায়ন। দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের প্রত্যাশা পূরণে দৃঢ় ভূমিকা রাখতে হবে যারা রাষ্ট্র যন্ত্রের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের। নৈতিক ও বাস্তবতার নিরিখে সরকারের অনুসৃত নীতিমালা প্রণয়নে তাদের সব সময় প্রবীণদের সুবিধা অসুবিধাগুলো মাথায় নিয়ে কাজ করতে হবে। বিশ্বের সব প্রবীণ ভালো থাকুন এবং এবারের বিশ্ব প্রবীণ দিবস সফল হোক এ প্রত্যাশায়!
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি