ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪ , ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

বেতন-মর্যাদায় পিছিয়ে শিক্ষকরা

মতামত

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ০০:০০, ৫ অক্টোবর ২০২৩

সর্বশেষ

বেতন-মর্যাদায় পিছিয়ে শিক্ষকরা

‘শিক্ষক দিবস কিভাবে কাটাবো? কি দিয়েছেন আমাদের? কি পেয়েছি আমরা? খণ্ডিত উৎসব ভাতা আর বেতন হয়তো দিয়েছেন কিন্তু মর্যাদা? কতোটুকু বা কেনো দিয়েছেন? যদি মর্যাদা দিতেন তবে কি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখতেন? যদি মর্যাদা দিতেন তবে সামান্য সুবিধা দিতে লাখ টাকা ঘুষ দাবি করতেন? টাকা না পেয়ে ওই সামান্য সুবিধাও আটকে দিতেন’- কথাগুলো বলতে বলতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছিলেন প্রবীণ শিক্ষক গুলশান আরা। 

গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানী ঢাকার একটি সরকারি অফিসে দেখা হয় তাঁর সঙ্গে। শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে শিক্ষক দিবসের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাতেই প্রতিক্রিয়ায় এ কথাগুলো বলছিলেন মানিকগঞ্জের সাঁটুরিয়া উপজেলার কৈট্টা হাইস্কুলের এ প্রধান শিক্ষিকা। তবে, আলোচনা দীর্ঘায়িত হলো না। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই অফিসের এক কর্মচারী এসে শিক্ষিকাকে কড়া গলায় বললেন, আস্তে কথা বলেন, চিল্লাচ্ছেন কেনো? চিল্লাচিল্লি করতে হলে বাইরে যান। এ ঘটনা থেকে বর্তমান সমাজে শিক্ষকদের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
আজ ৫ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করতে চাই তার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষক: শিক্ষকের স্বল্পতা কাটানো বৈশ্বিক দাবি।’ শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কোর সদস্যভুক্ত প্রতিটি দেশে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতি বছর এদিন দিবসটি উদযাপন করা হয়। আজ যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। 

জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শিক্ষকদের মর্যাদা ও মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে শিক্ষকের গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করা, শিক্ষকদের অধিকার সম্পর্কে জানানো, মানসসম্মত শিক্ষা তথা সকল শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে শিক্ষকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আলোকপাত করা এবং প্রবীণ শিক্ষকদের অভিজ্ঞতাকে জানা ও কাজে লাগানোই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে। 
১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ সভায় ৫ অক্টোবর দিনটিকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমবার দিবসটি পালন করা হয়। তবে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বিভিন্ন দেশে শিক্ষকরা মোটা দাগে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উদযাপন শুরু করেন। ইউনেস্কোর অনুমোদনে প্রতিবছর পৃথক প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

ইউনেস্কোর মতে, শিক্ষা ও উন্নয়নে শিক্ষকরা বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। মানুষের মধ্যে সচেতনতা, উপলব্ধি সৃষ্টি ও শিক্ষকদের ভূমিকার স্বীকৃতিস্মারক হিসেবে দিবসটি গুরুত্বপূর্ণ। মানবিক বিপর্যয় বা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে আক্রান্ত হয়েও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিনির্মাণে শিক্ষকরা তাদের ভূমিকা রেখে চলেছেন। 

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা এখনো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির নন-গেজেটেড কর্মচারী। আর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ১৩ বছর আগে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার পদমর্যাদা পেলেও এখনো নানা বঞ্চনার শিকার। আবার উচ্চশিক্ষায় শিক্ষকতা করা মেধাবী শিক্ষকরাও পাননি কাঙ্ক্ষিত পদমর্যাদা। কেবল 'অধ্যাপক' পদেই রয়েছে তিন রকম পদমর্যাদা। বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের এই পদমর্যাদার সংকট দিন দিন কেবলই জটিলতর হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদাক্রমেও শিক্ষকরা রয়েছেন বেশ পেছনে। আবার শিক্ষকতায় সরকারি ও বেসরকারি দুটি ভাগ থাকায় বেসরকারি শিক্ষকরা কোনো পদমর্যাদাই পান না। তাদের বঞ্চনা আরো বেশি।

দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বেতন বৈষম্য তীব্র। বৈষম্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও। অথচ একই শিক্ষাগত যোগ্যতায় তাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সরকারি শিক্ষকরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ পাচ্ছেন। বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষকরাও কেন্দ্রীয়ভাবে বেসরকারি শিক্ষা নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ পাচ্ছেন। একই সিলেবাস ও কারিকুলামে তারা পাঠদান করলেও বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। অথচ, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ৯৭ ভাগই বেসরকারি খাতের। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সংখ্যায়ও তারাই বেশি।

বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যাপক মাজহারুল হান্নান গতকাল বুধবার মুঠোফোনে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এ শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য ক্রমশ কমিয়ে আনার কথা বলা আছে। সমযোগ্যতায় চাকরি করলে আর সমপরিমাণ শ্রম দিলে বেতন-ভাতায় অধিক বৈষম্য সৃষ্টি করা কাম্য নয়। সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী সব সুযোগ-সুবিধা পান তারা। স্কেলভিত্তিক পূর্ণ বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা হিসেবে এক হাজার ৫০০ টাকা, বার্ষিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও পান। এর বাইরে উৎসব বোনাস স্কেলভিত্তিক দেয়া হয়। পরবর্তী স্কেল নির্ধারণকৃত ও চলমান আছে। ধারাবাহিক প্রমোশন আছে ও বদলির ব্যবস্থা চালু আছে। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড সরকারি কর্মকর্তার পদমর্যাদা ভোগ করেন। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোনো পদমর্যাদাই নির্ধারণ করা নেই। বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারি শিক্ষকদের মতো বদলির সুবিধা পান না। দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকতে হয়। আর প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনও করতে হয় নতুনভাবে নিয়োগ নিয়ে। সরকারি শিক্ষকরা বেতনের শতভাগ উৎসব ভাতা পেলেও বেসরকারি শিক্ষকরা পাচ্ছেন ২৫ শতাংশ। এ নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষ আছে। 

জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন স্কেলও সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সমানই। তবে কেবল মূল বেতনটুকুই সমান, বাকি সব ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে। ৩০ হাজার বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী প্রতি মাসে সরকার থেকে বেতন স্কেলের মূল অংশটা পান। এর সঙ্গে নামমাত্র ঘরভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা দেয়া হয়। তাদের বর্তমানে জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী মূল বেতনের শতভাগ বেতন প্রদান করা হয়। সঙ্গে দেয়া হয় মাত্র এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া। এটি নির্ধারিত, অর্থাৎ বাড়িভাড়া বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। চিকিৎসা ভাতা নির্ধারিত মাত্র ৫০০ টাকা। আর বিদেশ ভ্রমণ, উন্নত প্রশিক্ষণ এগুলোতে বেসরকারি শিক্ষকরা পিছিয়ে।

জনপ্রিয়