ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ , ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

ফিতরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য

মতামত

মাওলানা মুহাম্মদ রাহাত

প্রকাশিত: ০০:০০, ৯ এপ্রিল ২০২৪

সর্বশেষ

ফিতরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য

পবিত্র রমাদানুল মোবারাক মহান রবের নৈকট্য লাভের অনন্য উপায়। কিন্তু রোজা পালন করতে গিয়ে ভুল-ত্রুটি স্বাভাবিক। রোজা পালনকালীন ভুলভ্রান্তি ত্রুটিমুক্ত করতে মহান আল্লাহ ফিতরা আদায়ের বিধান দিয়েছেন। ফিতরা হলো ওইসব খাদ্যবস্তু দান করা যা দ্বারা রোজাদার তার রোজা ভঙ্গ করতেন। সোজা কথায় ফিতরা হলো এমন খাদ্যসামগ্রী দান করা যা দ্বারা গরিবরা ঈদের দিনে খেয়ে খুশি হন। আর এই দান প্রত্যেক রোজাদারকেই দিতে হবে। 

ইসলাম সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ধনী-গরিব মিলে যেনো সমানভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন সেজন্য ইসলাম ফিতরার ব্যবস্থা করেছে। এটি একটি দানের খাত। এই দানকে বলা হয় রোজার কাফফারা। 

ফিতরা কেনো দিতে হয়: ইসলামে সম্পদের পবিত্রতার জন্য যেমন জাকাত দিতে হয়, ঠিক তেমনি রোজার পবিত্রতার জন্য ফিতরা আদায় করতে হয়। আরো সহজ করে বললে বলতে হয়, সিয়াম পালন করতে গিয়ে প্রতিটি মানুষেরই অবচেতন মনে কোনো না কোনোভাবে সিয়ামের অনেক সাধারণ ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে। সিয়াম পালন করতে গিয়ে সেই ত্রুটি-বিচ্যুতিরই ক্ষতিপূরণ ও সংশোধনী হচ্ছে ফিতরা, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত দানের ইবাদত। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ফিতরা রোজার সব দোষ-ত্রুটি দূর করে এবং গরিবের খাবারের ব্যবস্থা হয়।

যাদের ওপর ফিতরা ওয়াজিব: ফিতরা সেই মুসলমানের ওপর ওয়াজিব যার ঈদের রাত ও দিনে নিজের এবং পরিবারের আহারের প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ থাকে। আর এই সদকা হিসাবের ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষকেই হিসাবে রাখতে হবে। একটি পরিবারে স্বাধীন ও ক্রীতদাস, পুরুষ ও নারী, ছোট,  বড়, ধনী ও গরিব, শহরবাসী ও মরুবাসী সিয়াম পালনকারী, ভঙ্গকারী ইত্যাদির মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। এক কথায় এ দান পরিবারের সব সদস্যকে হিসাবে রেখে, পরিবারে যতোজন সদস্য আছেন ততোজনের ফিতরা আদায় করতে হবে। সদাকাতুল ফিতর ওয়জিব হওয়ার জন্য জাকাতের সমপরিমাণ নিসাব হওয়া শর্ত নয়। 

ফিতরা আদায় করার সময়: ফিতরা আদায়ের ফজিলতপূর্ণ সময় হলো ঈদের দিন সূর্যোদয়ের পর থেকে ঈদের সালাতের পূর্ব পর্যন্ত। ঈদের দু-একদিন পূর্বেও ফিতরা আদায় করা জায়েজ। কেনোনা সাহাবায়ে কেরাম এরূপ করেছেন। ঈদের নামাজের পর ফিতরা আদায় শুদ্ধ নয়। 

ইবনে উমর (রা.) বলেন, নবী (সা.) লোকেদের ঈদের নামাজের জন্য বের হওয়ার পূর্বে ফিতরা দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। সুতরাং ঈদের দিন ফিতরা আদায় করা সর্বোত্তম। 

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি নামাজের আগে তা আদায় করে দেবে তবে তার সদকা গ্রহণযোগ্য হবে, আর যে নামাজের পর আদায় করবে তার সদকা সাধারণ দান বলে গণ্য হবে (আবু দাউদ)। অর্থাৎ কেউ ঈদের জামাতের পর ফিতরা আদায় করলে তা সাধারণ দানে পরিণত হবে। সদকাতুল ফিতরের যে নেকি, সেই নেকি আর পাওয়া যাবে না। 

তাই ফিতরা ঈদের নামাজের আগেই বণ্টন করা ওয়াজিব। ঈদের এক বা দুই দিন আগে আদায় করলেও অসুবিধা নেই। আলেমদের বিশুদ্ধ অভিমত হলো, ফিতরা আদায় করার সময় শুরু হয় ২৮ রমজান থেকে। কারণ, রমজান ২৯ দিনও হতে পারে। আবার ৩০ দিনও হতে পারে। তাই ঈদের আগে দিলে গরিবরা আগে থেকেই ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারে।
রাসুল (সা.) সাহাবিরা ফিতরা ঈদের একদিন বা দুই দিন আগে আদায় করতেন। এ ছাড়া ফিতরা আদায়ের সময় যাতে সংকীর্ণ না হয়, সেজন্য ঈদুল ফিতরের নামাজ সামান্য দেরিতে পড়া উত্তম। এর ফলে ফিতরা আদায়ের যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়।

ফিতরা পাবার যোগ্য কে: কারা ফিতরা পাওয়ার যোগ্য বা কোন কোন প্রকারের লোক ফিতরা নিতে পারবেন-এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে কিছু মতভেদ রয়েছে। একদল আলেম মনে করেন, যারা সাধারণ সম্পদের জাকাতের হকদার তারাই সদকাতুল ফিতরার হকদার। তাদের দলিল হলো, ফিতরাকে রাসুল (সা.) জাকাত ও সদাকা বলেছেন। তাই যেটা সম্পদের জাকাতের খাত হবে, সেটা ফিতরারও খাত হবে। সদাকার যে খাত আল্লাহ সুরা তওবায় উল্লেখ করেছেন, সেই খাত ফিতরার জন্যও হবে। আল্লাহ্ বলেন, জাকাত হলো কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হলো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

অন্য এক দল আলেম মনে করেন, ফিতরা কেবল ফকির মিসকিনদের হক, অন্যান্যদের নয়। তাদের দলিল হলো, ইবনে আব্বাস (রা.) এর হাদিস। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল ফিতরা ফরজ করেছেন রোজাদারের অশ্লীল ও বাজে কথা-বার্তা হতে পবিত্রতা এবং মিসকিনদের আহার স্বরূপ। অধিকাংশ আলেমদের মতে এই মতটিই অধিক সহিহ। কারণ, এই মতের পক্ষে স্পষ্ট দলিল বিদ্যমান। আর প্রথম মতটি একটি কিয়াস মাত্র। আর দলিলের বিপরীতে কিয়াস বৈধ নয়।

ফিতরাকে জাকাত সম্বোধন করলেও উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। যেমন-ফিতরা এমন ব্যক্তির ওপরও ওয়াজিব যার বাড়িতে সামান্য কিছু খাবার আছে মাত্র। কিন্তু জাকাত কেবল তার ওপর ফরজ যার নিসাব পরিমাণ অর্থ-সম্পদ রয়েছে। জাকাত বছরের জমাকৃত ধন-সম্পদের কারণে দিতে হয়। আর ফিতরা রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে দিতে হয়। রাসুল (সা.) বলেন, প্রত্যেক ভালো কাজ দান। তবে নিঃসন্দেহে প্রত্যেক ভালো কাজ জাকাত নয়। তাই ফিতরাকে সদাকা বলার কারণে তা জাকাতের অন্তর্ভুক্ত হবে না।

কী দিয়ে ফিতরা দিতে হয়: আমাদের উপমহাদেশে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা হলেও হাদিসে খাদ্য দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায়ের কথা এসেছে। আবু সাইদ আল-খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আমাদের মাঝে বর্তমান থাকা অবস্থায় আমরা ফিতরা বাবদ এক সা গম বা খেজুর, যব, পনির অথবা কিসমিস দান করতাম। আমরা অব্যাহতভাবে এ নিয়মই পালন করে আসছিলাম। অবশেষে মুয়াবিয়াহ (রা.) মদিনায় আমাদের নিকট আসেন এবং লোকেদের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, আমি শাম দেশের উত্তম গমের দু’ মুদ পরিমাণকে এখানকার এক সা‘র সমান মনে করি। তখন থেকে লোকেরা এ কথাটিকেই গ্রহণ করে নিলো। আবু সাইদ (রা.) বলেন, আমি কিন্তু সারা জীবন ওই হিসাবেই সদকাতুল ফিতর পরিশোধ করে যাবো, যে হিসাবে আমি রাসুল (সা.)-এর যুগে পরিশোধ করতাম।

ফিতরার পরিমাণ: আমাদের দেশ ও উপমহাদেশে খাদ্যদ্রব্য গমকে হিসেবে ধরে ফিতরার টাকা নির্ধারণ করা হয়। ওপরে উল্লেখিত হাদিসেও এসেছে কী পরিমাণ খাদ্য দিয়ে রাসুল (সা.) ফিতরা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং প্রত্যেকের জন্য মাথাপিছু এক ‘সা’ খাদ্যশস্য ফিতরা হিসেবে দিতে হবে। ‘সা’ হচ্ছে তৎকালীন এক ধরনের ওজনের পরিমাপক। মাঝারি দেহের অধিকারী মানুষের হাতের চার ‘মুদে’ এক ‘সা’ হয়। অর্থাৎ দুই হাতের কব্জি একত্র করে মুনাজাতের মতো একত্রিত করে তাতে যতোটুকু ফসল নেয়া যায়, ততোটুকুকে বলা এক ‘মুদ’। মুদ দ্বারাই আরবে দানা জাতীয় শস্য মাপা হয়। একাধিক শস্য যদি এক-‘সা’ এক-‘সা’ মেপে কেজি দিয়ে ওজন করা হয়, তাহলে এক শস্যের ওজন অপর শস্যের ওজন থেকে কম-বেশি হবে। তাই কোনো নির্দিষ্ট ওজন দ্বারা সা নির্ধারিত করা সম্ভব নয়। 

রাসুল (সা.) এর সুন্নাহ হচ্ছে তৎকালীন প্রচলিত খাদ্যদ্রব্যের এক সা দ্বারা একজনের ফিতরা আদায় করা। সেই হিসেবে আমাদের উপমহাদেশে প্রচলিত খাদ্যদ্রব্য হচ্ছে চাল এবং আটা। সুতরাং সুন্নাহ হলো চাল বা আটা দ্বারা এক সা করে একজনের ফিতরা আদায় করা। বর্তমানে আমাদের দেশে এক ‘সা’তে আড়াই কেজি চাল হয়।

সা নিয়ে মতভেদ: আমাদের উপমহাদেশে অর্ধ সা গম বা আটার পরিমাপের অর্থ দ্বারা ফিতরা নির্ধারণ করা হয়। যদিও হাদিসে পাঁচটি খাদ্যদ্রব্যের এক সা দেয়ার কথা এসেছে। অর্ধ সা ফিতরা দেয়ার ফতোয়াটি মুয়াবিয়ার (রা.)। যা আগের উল্লেখিত হাদিস থেকে বোঝা যায়। একইসঙ্গে গম দ্বারা এই সা এর পরিমাণ হলো ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম যা ইরাকের প্রচলিত সা। আর মদিনার সা দিয়ে গমের পরিমাণ হলো ২ কেজি ৪০০ গ্রাম।

সুতরাং মদিনা এবং ইরাকের সা এর পার্থক্য রয়েছে। একইসঙ্গে হাদিসে এসেছে এক সা দেয়ার কথা। রাসুল (সা.) এবং ইসলামের চার খলিফা পর্যন্ত বলবৎ ছিলো। 

উপর্যুক্ত কারণগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এক সা মদিনার পরিমাপেই একটি ফিতরা আদায় করতে হবে। কেউ যদি ইরাকের সা এর পরিমাপ ধরে মুয়াবিয়া (রা.) ফতোয়া অনুযায়ী অর্ধ সা দিয়ে ফিতরা দেযন, তাহলে তা সুন্নাহ সম্মত হবে না। কেনোনা ওপরের উল্লেখিত হাদিসে সাহাবি আবু সাইদ আল-খুদরি (রা.) সহ তৎকালীন অনেকে মুয়াবিয়া (রা.) ফতোয়াকে মেনে নেননি। 

টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়: বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা বিভিন্ন কারণে সমস্যাযুক্ত। যার ফলে বিভিন্ন আলেম-উলামারা খাদ্যদ্রব্যের হিসাব করে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়ে ঐকমত্য পোষণ করেন। আমাদের উপমহাদেশে গমের এক সা ৩ কেজি ৩০০ কে দুই ভাগ তথা অর্ধ সা হিসাব ধরে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম গমের বা আটার মূল্য ধরে সর্বনিম্ন ফিতরা দেয়া হয়। একইভাবে খেজুর, কিশমিশ, পনির, যব দ্বারাও টাকার পরিমাণ করা হয়।

যদিও এক পক্ষ এই টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়কে জায়েজ নয় বলে মনে করেন। তাদের যুক্তি হলো, রাসুল (সা.) সময়েও মুদ্রার প্রচলন ছিলো। মুদ্রা দিয়ে ফিতরা আদায় জায়েজ হলে তিনি তা মুদ্রা দিয়েই দেয়ার নির্দেশ দিতেন। যেমন যাকাতের ক্ষেত্রে দিয়েছেন। একইসঙ্গে ফিতরা আদায়ে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো মিসকিনদের ভালো খাওয়া দাওয়া করানো। সেই কারণে টাকা নয় বরং খাদ্য দ্বারাই ফিতরা আদায় করতে হবে। যেমন হাদিসে সুস্পষ্টভাবে এসেছে।

অন্য পক্ষের যুক্তি হলো, বর্তমান পরিস্থিতি একজন মিসকিন তার ফিতরা সংগ্রহ করতে গেলে দু-চারজনের বেশি সংগ্রহ করতে পারবে না ওজনের কারণে। একইসঙ্গে শুধু খাদ্য দিয়েই একজন মিসকিন জীবনযাপন করতে পারেন না। তার প্রয়োজনীয় সবকিছু পূরণ করতে হলে টাকার প্রয়োজন। আবার টাকা বহন করতে সুবিধাজনক। টাকা দিয়ে ওই মিসকিন তার পছন্দের খাদ্য কিনে খেতে পারবেন।

একজন মিসকিন যদি খাদ্য ফিতরা সংগ্রহ করেন, তাহলে তার অতিরিক্ত খাদ্য জমা হয়ে যাবে। যা তাকে কম দামে দোকানে বিক্রি করতে হবে। এটা তারজন্য লোকসান। সুতরাং খাদ্যদ্রব্য নয় সময়ের পরিস্থিতির কারণে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা যুক্তিযুক্ত। যা অধিকাংশ মুসলিমের ঐকমত্যের কারণে ইনশাআল্লাহ তা কবুল হবে। 

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি পাঁচ প্রকার খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা যাবে। যা তৎকালীন আরবের প্রধান খাদ্য ছিলো। সেই হিসেবে যে অঞ্চলের যে খাদ্য প্রধান সেই খাদ্য দিয়েই ফিতরা দেয়া সুন্নাহ। যদিও আমাদের উপমহাদেশে হাদিসে বর্ণিত পাঁচ প্রকারের খাদ্য (যব, খেজুর, পনির, কিশমিশ ও গম) এর পরিমাপ করে ফিতরার টাকা নির্ধারিত হয়। 

সেই হিসাবে উন্নত মানের খেজুরের দাম বর্তমান সময়ে সবসময়ই বেশি হয়। এরপরের স্থান রয়েছে পনির যার মূল্য খেজুরের চাইতে কিছু কম। এভাবে কিশমিশ, যব এবং গম। যা হাদিসে উল্লেখিত খাদ্যদ্রব্য।

আমাদের উপমহাদেশে গমের অর্ধ সা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম ধরে সর্বনিম্ন ফিতরা নির্ধারণ করা হয়। যে হিসাব দিয়েই ধনী-গরিব, সচ্ছল, অসচ্ছল, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সবাই ফিতরা আদায় করেন। যা যৌক্তিক কারণে কখনোই সঠিক নয়। কেনোনা সামর্থ্য অনুযায়ী ফিতরা দিতে হবে। প্রতিবছর গমের হিসাব ধরে ফিতরা টাকা প্রকাশিত হওয়ার কারণে অধিকাংশ মুসলমানই জানেন না তাকে আসলেই কতো টাকা ফিতরা দেয়া উচিত। যদিও ইসলামিক ফাউন্ডেশন সব খাদ্যদ্রব্যের টাকা নির্ধারিত করে দিলেও, প্রচারিত হয় শুধুমাত্র সর্বনিম্ন ফিতরা টাকা ৬০/৭০/৮০ টাকার মতো। যা এবার সর্বনিম্ম ১১৫ টাকা। একজন রিকশাওয়ালা, দিনমজুরসহ খুবই সামান্য আয়ে চলেন এমন ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য।

রাসুল (সা.) এর সুন্নাহ থেকে সরে এসে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়ের কারণে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। যিনি ফিতরা দিচ্ছেন তিনি সুন্নাহ মানছেন না। কারণ, যিনি নিচ্ছেন তিনি খাদ্য না নিয়ে টাকা নিতে আগ্রহী। যার ফলে যারা ফিতরা নিচ্ছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেকভাবে। 

যদি রাসুল (সা.) এর সুন্নাহ অনুযায়ী খাদ্য দিয়ে যেমন-ন্যূনতম চাল দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হলে, যিনি ফিতরা দেবেন তিনি নিজেই খুঁজে খুঁজে তা দিয়ে আসবেন। এবং এটাই সুন্নাহ।  এক্ষেত্রে ফিতরা গ্রহীতাকে কষ্ট করে মানুষের দুয়ারে যেতে হবে না।

এ ছাড়া একজন ফিতরা গ্রহীতা যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য পাবেন, সেই খাদ্য সে এমন কারো কাছে বিক্রি করবেন যে কম আয়ের মানুষ। এতে করে দুই শ্রেণিই উপকৃত হতে পারে। তা ছাড়া সারা উপমহাদেশে গমের দামে ফিতরা দেয়ার কারণে একজন দানকারী খুবই সামান্য টাকাই ফিতরা দিচ্ছেন। যা অন্যান্য খাদ্য দিয়ে দিতে হলে আরো অনেক বেশিই দিতে হতো। একইভাবে কম দেয়ার কারণে ফিতরা গ্রহীতাও কম টাকা পাচ্ছেন।

ফিতরার উপকারিতা: এই দান যেহেতু রোজা পালনের ভুল-ত্রুটির জন্য, সেহেতু এই দানের বিনিময়ে আল্লাহ আমাদের গোনাহগুলোকে মিটিয়ে দেন। রাসুল (সা.) হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। তিনি সমাজে সাম্য তৈরির জন্য এই সদকার প্রচলন করেছেন। যাতে ধনী-গরিব, দুঃস্থ, অসহায় সবাই মিলে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। 

এ ছাড়া আল্লাহ আমাদের শারিরীক সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু দান করেছেন। যার কারণে আমরা বেঁচে থেকে সুস্থ শরীরে এক মাস সিয়াম পালন করতে পারলাম। সুস্থতা এবং আমল করতে পারার কারণে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া স্বরূপ হলো এই ফিতরা। যা দেহের জাকাত নামেও পরিচিত।

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, প্রতিটি ব্যক্তিকে তার পরিবারের সব সদস্যের ফিতরা দিতে হবে, যার ঘরে দুই তিন বেলার পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে। একইসঙ্গে খাদ্যদ্রব্য দিয়েই ফিতরা আদায় সুন্নাহ। তবে পরিস্থিতির কারণে টাকা দিয়েও ফিতরা আদায় করা যাবে। তবে তা অবশ্যই সামর্থ্য অনুযায়ী দিতে হবে। সবার উচিত সামর্থ্য অনুযায়ী সুন্নাহ পদ্ধতিতে ফিতরা আদায় করা।

লেখক: শিক্ষক, উত্তর রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।

জনপ্রিয়